ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কাউন্সিল নিয়ে মাথাব্যথা নেই বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:২৫:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

 

 

বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। সেটি ছিল দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। সে অনুসারে প্রায় তিন বছর আগেই শেষ হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ। অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে দলটি। অথচ কাউন্সিল নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কাউন্সিলের কথা যেন ভুলেই গেছে বিএনপি। এ ব্যাপারে দলের ভিতরে কোনো আলাপ-আলোচনা পর্যন্ত নেই। এখন তাদের একটাই টার্গেট- ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার’। সে দাবি আদায়ে চলছে বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠনের মহাযজ্ঞ। ডান, বাম, মধ্যপন্থি ইসলামীসহ সব ধরনের সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই চলছে দফায় দফায় যোগাযোগ। এক্ষেত্রে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

 

এ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে আপাতত কোনো চিন্তাভাবনা নেই। কারণ এ মুহূর্তে আমাদের একমাত্র দাবি- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। যে সরকারের মাধ্যমে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব হবে। দেশ ফিরে পাবে গণতন্ত্র। দেশবাসী ফিরে পাবেন তাদের অধিকার।’ জানা গেছে, আর মাত্র এক মাস পর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিরও তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সময়মতো কাউন্সিল হলে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলেরও মেয়াদ পার হয়ে যেত এত দিনে। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। তবে বিগত তিন বছরে কাউন্সিল না হওয়ার পেছনেও বেশ কিছু যুক্তি দেখিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। তার মধ্যে রয়েছে- দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস ও অসুস্থতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাসিত জীবনযাপন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক পরিবেশ নিজেদের অনুকূলে না থাকা। সব মিলিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করার ‘বাস্তবসম্মত’ পরিস্থিতি ছিল না বিএনপির। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর কয়েক ধাপে দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান আর নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্য মিলিয়ে প্রায় ৫৯৪ সদস্যের এক ঢাউস কমিটি করে বিএনপি। তারপরও অনেকে পদ না পেয়ে পরবর্তী কাউন্সিলের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি। অবশ্য করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দেড় বছর সবকিছু স্থবির হয়ে আছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের নিয়ম। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ায় ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল। এই বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রেখেই ২০১৯ সালের জুনে প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু

 

করোনা মহামারির কারণে শেষ পর্যন্ত সেটি আর সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেন, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলা এবং নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য কাউন্সিল অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেদিক বিবেচনায় দুই বছর আগেই আমাদের জাতীয় কাউন্সিল করা দরকার ছিল। কিন্তু কী কারণে করতে পারিনি, সেটা সবাই জানে। আর এখন তো কভিড-১৯ এর কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমই চলছে সীমিত পরিসরে। সুতরাং জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে এখন আর ভেবে লাভ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাউন্সিলের আয়োজন করা হবে। করোনা সংক্রমণসহ নানা কারণে দলের জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করতে না পারলেও একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে বিএনপির কাছে। চলমান নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার চেয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে থেকে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছে দলটি। রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহৎ ঐক্য গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। অল্প সময়ের মধ্যেই বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ হয়েছে বিএনপির। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার অপেক্ষা। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সংলাপের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রস্তুত। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে  বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় হলে জনগণের অধিকার আদায় হবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি অব্যাহত আছে। ফলে নতুন ইসি গঠন নিয়ে এ মুহূর্তে বিএনপির কোনো মাথাব্যথা নেই। করোনার বিধিনিষেধ উঠে গেলে বিএনপির চলমান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হবে।