চট্টগ্রামে ইসকন নেতার জামিন না মঞ্জুরের ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণে সৃষ্ট সংঘর্ষে রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবি নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এই আইনজীবী নিহত হন।
জানা যায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে চিন্ময় কৃষ্ণ-এর অনুসারিরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আদালতে শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। তবে তাঁর অনুসারীদের বাধার কারণে প্রিজনভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি। কয়েক ঘন্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে আহত হয় রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবি সাইফুল ইসলাম আলিফ। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ অ্যাডভোকেট এনামুল হক দৈনিক বায়ান্নকে বলেন, সাইফুল ইসলাম আর্ন্তজাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময়কে দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। জানা যায়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে চিন্ময় কৃষ্ণ-এর অনুসারিরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আদালতে শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। তবে তাঁর অনুসারীদের বাধার কারণে প্রিজনভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি। কয়েক ঘন্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ওই আইনজীবি মারাত্নকভাবে আহত হন। এ সময় আদালত এলাকার মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক অনুসারি নারী-পুরুষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে নানা শ্লোগানের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রর্দশন করতে থাকে। পরে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে বিক্ষোভকারিরা। এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চিন্ময়কে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এনিয়ে নগরীতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মোট ১০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি। এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে ৬ প্লাটুন বিজিবি।
জানা যায়, ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন-৬ এর কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে তোলা হলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। মূলত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করছেন তার অনুসারীরা। বিক্ষোভ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য সতর্কতামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুন্ডরীক ধামের সাবেক অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর (৩৮) জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময়সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ওই মামলার বাদী ছিলেন মো. ফিরোজ খান নামে এক বিএনপি নেতা। মামলার পরপরই দুজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার বিকেলে সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়।
সেখানে ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত নগরীর সবর্ত্র থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সতর্কাবস্থায় বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।