ঢাকা, সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ই পৌষ ১৪৩১

কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি আরিফ নায়ক না খল নায়ক?

সিলেট ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ০৮:১৩:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল চ্যেধুরী নায়ক না খল নায়ক তা নিয়ে সিলেটজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে ১০ মে সৌজন্য বৈঠককে কেন্দ্র করে ওই আলোচনা এখন তুঙ্গে। বিশেষ করে আরিফের পরামর্শ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমলে না নেয়ায় সিলেটের রাজনীতির মাঠে নতুন করে হিসেব নিকেশ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি আরিফুল হক ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে খল নায়কে পরিণত হয়েছেন-এমনটি সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে।

 

টানা ১০ বছর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন আরিফুল হক। সিলেটে ভোট ব্যাংকের রাজা হিসেবে খ্যাত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে আরিফুল হক মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিষয়টি দলীয় প্রধান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যার মাশুল দিতে হয়েছে সিলেটের অনেক নেতাকে। দন্ড পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন কেউ কেউ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটবাসীর উন্নয়নে আন্তরিকতার ছাপ রেখে গেছেন সার্বক্ষণিক। সিলেটবাসীর উন্নয়নের জন্যে মেয়র আরিফের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি বরাদ্দ দিয়েছেন। ওই টাকার উন্নয়ন হয়েছে। তবে টাকা ব্যবহার  নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। এখনো আলোচনা হচ্ছে। চাউড় হয়েছিল, সিলেটের কিছু প্রকল্প দুদুকের নজরদারিতে। এখন ওই আলোচনা হয় না। ওই অবস্থার মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এগিয়ে আসে। বিএনপির হাই কমান্ড জানিয়ে দেয় তারা নির্বাচনে যাবে না।

 

 

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ডেকে আনা হয় দলের সর্বোচ্চ ফোরাম থেকে। পাঠানো হয় সিলেট নগরীর নির্বাচনী মাঠে। মাঠে নেমেই সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন তিনি। দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শুরু থেকে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন আরিফুল হক। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান আরিফুল হক। চিরাচরিত নিয়মে ফাঁদ পাতেন। টার্গেট ফাঁদ পেতে এগিয়ে যেতে থাকেন। টার্গেটের লক্ষবস্তু নির্ধারণ করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে।

 

 

প্রবাদ বাক্য আছে ‘দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথা, ঘনিয়ে বসে কাছে। কথা দিয়ে, কথা নিয়ে প্রাণে মারে শেষে।’ এই নীতিতে আরিফুল হক ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর। এর মূল কারণের মধ্যে রয়েছে ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা। ঝামেলার প্রথমেই রয়েছে কিবরিয়া হত্যা মামলা। এছাড়া সিলেট নগরীর কয়েকটি প্রকল্পে দুদুকের নজরদারি। মেয়র নির্বাচনের কয়েক মাসের মাথায় নিরাপদ জোনে চলে যেতে সক্ষম হন আরিফুল হক। এর পরপরই আনোয়ারুজ্জামানকে ঘাঁয়েল করার পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন। নগরীতে চাউড় হতে থাকে আরিফের পরামর্শে পরিচালিত হন আনোয়ারুজ্জামান। ওই অবস্থার মধ্য দিয়ে নগরবাসীর হল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়টি সামনে আসে। আরিফুল হকের মেয়াদকালে নির্ধারিত হল্ডিং ট্যাক্স বর্তমান পরিষদ কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতেই নগরীতে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে আরিফুল হক মাঠে নামেন ।

 

১০ মে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের নামে ডেকে নেন। ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয় ওই সৌজন্য সাক্ষাত। পরদিন কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ হয় সাবেক ও বর্তমান মেয়রের গোপন বৈঠক। ওই বৈঠক সম্পর্কে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিগত পরিষদ অ্যাসেসম্যান্ট করেছিলাম। কিন্তু সে অ্যাসেসমেন্টে যে পরিমাণ গৃহকর দেওয়ার বিষয়টি এসেছে, সেটা অসহনীয় বলে নাগরিকেরা মতামত দিয়েছিলেন। সে কারণেই ওই গৃহকর স্থগিত করেছিলাম। এখন সেটাই বাস্তবায়িত হওয়ার পর নতুন করে নাগরিকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এ অবস্থায় বর্তমান মেয়রকে পরামর্শ দিয়েছি, নতুন গৃহকর স্থগিত করে নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করে যৌক্তিকভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হোক। মেয়র বিষয়টি আন্তরিকভাবে নিয়েছেন এবং নগরবাসীর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।’

 

আরিফুল হক চৌধুরীর এই বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে তিনি চেয়েছিলেন হল্ডিং ট্যাক্স স্থগিত হোক। হল্ডিং ট্যাক্স স্থগিত হলে আনোয়ারুজ্জামানের ব্যর্থতা প্রকাশ পেত। এটাও প্রকাশ পেত আনোয়ারুজ্জামান পরিচালিত হন আরিফুল হকের পরামর্শে।

 

১১ মে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। এই সংবাদে বিজয় উল্লাস প্রকাশের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন আরিফুল হক। কিন্তু মেয়র  আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন হল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রতিটি ওয়ার্ডে এশটি কমিটি কাজ করবে। ওই কমিটিতে দুইজন করে কাউন্সিলরও কাজ করবেন। নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করে ওইসব কমিটি কাজ করবে। কিন্তু হল্ডিং ট্যাক্স এসেসমেন্ট স্থগিত হবে না। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিশ্বাসযোগ্য ঘোষণায় থেমে যায় আরিফের বিজয় উল্লাস। উল্টো রাজনৈতিক মহলে তিনি খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে।ৃ