ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কী হবে আজ নারায়ণগঞ্জে

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৬ জানুয়ারী ২০২২ ০৩:০৬:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

দেশব্যাপী আলোচনায় থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ। এ নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজ নগরজুড়েই। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দুই প্রার্থীর প্রতীক নৌকা ও হাতি।

 

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে, নাকি পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে আসা তৈমূর আলম খন্দকারকে বেছে নেবেন ভোটাররা- তা জানতে এখন কেবল একটু অপেক্ষা। তবে আগামী নগরপিতা যিনিই হোন না কেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথাই বলছেন নগরবাসী। পুলিশের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের জন্য কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

 

নির্বাচন কমিশন-ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এবার পুরো সিটিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। গতকাল কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল। নির্বাচনে ভোট দেবেন সোয়া ৫ লাখ ভোটার। মেয়র পদে সাতজন; সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ ও কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন প্রার্থী রয়েছেন এ নির্বাচনে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। আজ ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের নারায়ণগঞ্জে আসার কথা রয়েছে। জানতে চাইলে তিনি  বলেন, আমাদের কার্যকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য নির্বাচন। আমি এই নির্বাচন প্রত্যক্ষভাবে পরিদর্শনের জন্য নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করব। ভোট ভালো হবে এই প্রত্যাশা আমার সবসময় থাকে।

স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিকট অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তুলনায় এবার নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের পরিবেশ পুরোপুরি ভিন্ন। ভোটের আগের দিনও নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। এতে আশা করা হচ্ছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হবে। উৎসবের আমেজ পুরো নারায়ণগঞ্জে। তবে শঙ্কা রয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। গত দুই দিন ধরেই বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠেছে। মেয়র প্রার্থীদের চেয়ে আজ কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে সবার মধ্যেই টেনশন কাজ করছে।

 

মেয়র পদে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা) এবং দলীয় পদ থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), খেলাফত মজলিশ প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), মো. কামরুল ইসলাম-স্বতন্ত্র (ঘোড়া), মো. জসীম উদ্দিন-বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বট গাছ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 

এ সিটিতে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৯২টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৩৩টি, ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ ও মহিলা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১।

 

 

প্রতি কেন্দ্রে ইভিএম ও নির্বাচনী মালামাল : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কেন্দ্রে কেন্দ্রে গতকাল ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে শুরু হয় নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানোর কাজ। চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তিনটি পয়েন্ট থেকে বিতরণ করা হয় এসব সরঞ্জাম। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এসে নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে বুঝে নেন সরঞ্জামাদি। তারপর পুলিশ প্রহরায় তা নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত কেন্দ্রে। মালামালসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা গতকাল রাতে কেন্দ্রেই অবস্থান করেছেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জানান, মোট ১৯২টি কেন্দ্রের সরঞ্জাম তিনটি স্থান থেকে পাঠানো হয়। নগরীর মরগ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সরঞ্জাম। ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরঞ্জাম পাঠানো হয় সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস স্কুল থেকে। আর বন্দর থানার মালামাল বিতরণ হয় বন্দরের হাজী ইব্রাহিম আলম চান উচ্চবিদ্যালয় থেকে।

 

রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার আরও বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো, পরিবেশও সন্তোষজনক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো নিয়োজিত আছেই। পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল ফোর্স, টহল বাহিনী, সবই থাকবে। র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সবাই থাকবেন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে যদি কোনোরকম ত্রুটি দেখা দেয় এ জন্য পুরো সিটি করপোরেশনের ৪৮ জনের টেকনিক্যাল পারসন নিয়ে মোবাইল টিম থাকবে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যখন যেখানে প্রয়োজন হবে, তারা তা সমাধান করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ভোটাররা তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আসবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ভোট কেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। ভোট শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাবেন। প্রার্থীরা দাবি করলেও নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই বলেও মনে করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। মাহফুজা আক্তার বলেন, সহিংসতা নিয়ে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেননি।

 

ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে : রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা বলেন, ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা কাজ করবে না। কেন্দ্রে যদি সিসি ক্যামেরা কাজ করে, তাহলে তো কেন্দ্রের ভিতরে বুথের গোপনীয়তা রক্ষা হলো না। কাজেই কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে। তবে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা নেই। কিছু কেন্দ্রে আছে। সেগুলো খুলে ফেলার মতো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

 

নিরাপত্তাবলয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা ভোটের পরের দিন পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। এ সিটিতে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৯২টি। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ ভোটের দিন পুলিশের ২৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ৬৪ মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। তিনটি এলাকা মিলিয়ে ১৪ প্লাটুন বিজিবি। ছয়টি চেকপোস্ট, সাতটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৫ জন, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। 

 

সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঝুঁকি বিবেচনায় ১৯২টি ভোট কেন্দ্রকেই বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। অবশ্য গত সিটি নির্বাচনে ১৭৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৭টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রাখা হয়েছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত নৌযান, স্থলযান, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো ও ইজিবাইকসহ সব যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

 

ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি পুলিশের : নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর পুলিশ লাইনস মাঠে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবিসহ ৫ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাউকে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। এসপি বলেন, ভোটের দিন ১৮ বছরের ওপরে যারা নারায়ণগঞ্জ থেকে বের হবেন তাদের এনআইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছে না, কাউকে হয়রানি করছে না। সন্ত্রাসী বা মাদক ব্যবসায়ী যাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

দাগি আসামিদের বিরুদ্ধেই অভিযান চলছে : নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ গতকাল এক মতবিনিময়ে বলেন, দাগি আসামিদের বিরুদ্ধেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের আরও ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। নির্বাচনের জন্য যারা থ্রেট হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে লিখিত, ফোনে বা অন্য কোনো মাধ্যমে অভিযোগ পাইনি। বহিরাগত প্রসঙ্গে মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের কথা জানি না, সেটা সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এ ছাড়া কোনো সরকারি বাসস্থানে প্রশাসনের লোক ছাড়া কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ২০০ মামলা করেছি। একজনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে এবং লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেছি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য।