রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সাধারণ মানুষ বলেন একটা জাতীয় পার্টি যাচ্ছেন। এমন শব্দ কানে এলে ভালো লাগে আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। সিলেট জাতীয় পার্টির আইকন। পার্টির দুর্দিনের কান্ডারি। ৩৬ বছর ধরে এই দলের সাথে নিজকে সম্পৃক্ত রেখেছেন শত প্রতিক‚ল পরিবেশের মধ্যেও। বয়সের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দেহে জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে। তারপরও সময়ে অসময়ে দলীয় নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।
কয়েক মাস আগেও তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন ঠিক, কিন্তু প্রতিনিয়ত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। খবর নিতে হয় দেহে বাসা বাঁধা রোগের। দলীয় নেতাকর্মীরা বাসায় গিয়ে হাজির হন প্রিয় নেতার শারীরিক অবস্থা জানার জন্যে। তাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। শুধু দলীয নেতাকর্মী নয়। অন্যদলের নেতাকর্মীরাও ছুটে যান আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্যে। শরীরের নাজুক অবস্থা নিয়েও সকলের সাথে কথা বলেন। আড্ডা দেন। আড্ডায় নিজকে তরতাজা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেহের জটিলতা সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, কেমন আছেন? আবদুল্লাহ সিদ্দিকী জানিয়ে দেন খুবই ভালো আছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ভালো নেই। তবে প্রিয়জনরা আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর সুস্থতা কামনা করেছেন।
দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি দিয়ে। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয পার্টি। সিলেট জেলা জাতীয় পার্টিও গঠন করা হয়। জেলা জাতীয় পার্টির কমিটিতে শ্রম সম্পাদকের পদের দায়িত্ব দেয়া হয় আবদুল্লাহ সিদ্দিকীকে। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠে। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সিলেটের রাজপথ কাঁপাতে থাকে জাতীয় পার্টি। যেসব কর্মসূচির অগ্রসৈনিক থাকতেন আবদুল্লাহ সিদ্দিকী।
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন এইচএম এরশাদ। সারাদেশের ন্যায় সিলেটের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ সিলেট কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ করে জাতীয় পার্টির ২০ জন নেতাকে গণদুশম ঘোষণা করেন। এই গণদুশমনের তালিকার ৮ম স্থানে ছিলেন আবদুল্লাহ সিদ্দিকী। গণদুশমন তালিকার কয়েকজ নেতার বাসা বাড়িতে হামলা হয়। কয়েকটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বাদ পড়েননি আবদুল্লাহ সিদ্দিকীও। জীবনের ঝুঁকি এড়াতে আবদুল্লাহ সিদ্দিকী একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে দুই মাসের জন্যে বের হয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যেখানেই যান সেখানেই দেখতে পান প্রতিপক্ষদের। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ফিরে আসেন সিলেট শহরে। ওই নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতে জয় লাভ করে জাতীয পার্টি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে সিলেটে জাতীয় পার্টির সোডাউন করতে হলে রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় শক্তিশালী আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর বিকল্প নেই। এই নেতা একাধিকবার সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কেন্দ্রীয জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা।