চাকুরি জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবীশ) অ্যাসোসিয়েশনের কলম বিরতি চলছে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিসে কর্মরত ৪৫ জন নকল নবীশ সদর অফিসের কেও নেই।
জানা যায়, শুধু এই অফিসেই নয় চাঁদপুর জেলাসহ সারা দেশে একই অবস্থা। এতে করে দলিলের নকল নিতে আসা ব্যক্তিরা প্রতি নিয়ত বিড়ম্বনায় পড়েছেন। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন- বুধ ও বৃহস্পতিবার এই অফিসে নতুন দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। এই দলিলগুলো পরবর্তীতে নকলের জন্য নকল নবিসদের প্রয়োজন। তাদের মাধ্যমেই এই দলিলের নকল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে তারা কর্ম বিরতি থাকায় সাধারণ জনগণের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এবিষয়ে নকল নবীশ অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা সভাপতি ইসমাইল মাহমুদ সাগর জানান, আমাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সারা বাংলাদেশেই আমরা নকল নবীশগন ২০ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক এই আন্দোলনে শরিক হয়েছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সারাদেশের নকল নবীসরা একত্রিত হয়ে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে এই আন্দোলনে আমরা শরিক হয়েছি। সেখান থেকে আমরা বর্তমান তত্ত্বাবধায় সরকার প্রধানের কাছে আমাদের চাকুরি জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বৃটিশ আমল থেকেই ভূমি অফিসগুলোতে নকল নবীশরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি সরকারই আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু কেউ আমাদের কথা রাখেননি। এমতাবস্থায় দেশজুড়ে কর্মরত সব নকল নবীশরা একত্রিত হয়ে এই দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছি। আমরা আর কোনো আশ্বাস চাই না। এবার দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা প্রায় ১ মাসের মতো প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে দেশজুড়ে কলম বিরতি চালিয়ে আসছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে তারা আরও জানান, সারাদেশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত বৈষম্যের শিকার নকল নবীশদের চাকরি জাতীয়করণের ১ দফা ১ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে স্ব-স্ব অফিসে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কলম বিরতি পালন করে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
চাঁদপুর সদরের সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দলিলের নকল নিতে আসা জনৈক ব্যাক্তির সাথে বর্তমান এই পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তিনি জানান, গত কয়েকমাস আগে একটি জায়গা রেজিস্ট্রি করেছি। জমা খারিজ করার জন্য দলিলের নকলের আবেদন করেছি। কিন্তু নকল নবীশদের আন্দোলন চলমান থাকায় নকল পাচ্ছি না। জমি খারিজও করা যাচ্ছে না। কবে নকল পাব তাও কেউ জানাতে পারছে না। শুধু আমি নয়, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।
চাঁদপুর শহরে বসবাসরত প্রবাস ফেরৎ নুরে আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, আমি দেশে এসে একটি জমি খরিদ করি এবং তার রেজিস্ট্রি করি কিন্তু নকল না পাওয়ার কারণে দলিলটি খারিজ করতে পারছি না। আমি বিদেশ চলে গেলে এ জমিটির খারিজের ব্যত্যয় ঘটবে। আমার মতে এমন নকল না পাওয়া অনেক লোকজন নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে।
নকল নবীসদের এই কলম বিরতির কারণে নতুন করে দলিল রেজিস্ট্রির সংখ্যাও অনেকটা কমে গেছে। কারণ সাধারণ জনগণ দেখছে তারা একটি নতুন দলিল রেজিস্ট্রি করে নকল যে কবে পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা তাদের দলিল করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এতে করে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা রেজিস্টার শামীম আলমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, নকল নবিশদের কারণে আমাদের কাজের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দলিল রেজিস্ট্রি করার পর জনগণ নকল নিতে আসলে তাদেরকে বিরম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। তাই আমি চাই তারা দ্রুত কাজে ফিরে আসুক, তাহলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে