ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কেমন আছেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০১:০২:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কেমন আছেন এমন প্রশ্ন এখন অনেকেই করছেন। এ প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল দশটায়  বলেন,  ম্যাডাম আগের মতোই আছেন।

শুধু রক্তক্ষরণটা কালকে পর্যন্ত হয়নি।

আপনিতো শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাতে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন, তিনি কি কথাবার্তা বলছেন? জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, হ্যাঁ উনি কথাতো প্রথম থেকেই বলছেন। কথাতো কখনও বন্ধ হয়নি। সব সময় কথা বলেন। প্রতিদিন উনি দুই-তিন ঘণ্টা চেয়ারে বসেন। হেটে টয়লেটে যান। এগুলোতে আছে-কিন্তু ভয়টা হচ্ছে, তার রক্তক্ষরণ যেটা হচ্ছে সেটার সোর্সটা বের করা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই পর্যন্ত ক্যাথেডাল যাওয়ার যে ডিভাইস সেটা এদের এখানে নেই। বাংলাদেশের কোথাও এটা নেই। আমি ডাক্তারদের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি এটাকে টিপস বলে। ট্রিটমেন্টটাকে টিপস বলে। এটা এডভান্স সেন্টার ছাড়া হবে না। এখানে নেই।

শুনলাম এ ধরণের যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে আছে- তখন মির্জা ফখরুল বলেন, হ্যাঁ যুক্তরাষ্ট্রে আছে, যুক্তরাজ্যে আছে, জার্মানীতে আছে। উন্নত দেশগুলোতে আছে।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের কিছু জানানো হয়েছে কি। জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, না সেরকম কিছু পাচ্ছি না। যেটুকু পাচ্ছি তা উল্টাপাল্টা পাচ্ছি। তারা মিডিয়াতে যেসব বলছেন সেগুলো নেগেটিভ কথাই বলছেন।

আপনাদের সঙ্গে সরাসরি সরকারের কারও যোগাযোগ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,  না সেরকম কিছু জানা নেই।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা গণমাধ্যমে এসে কেন কথা বলছেন না জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই রোগীর প্রাইভেসি বলতে একটা কথা আছে। কোনো চিকিৎসকই তার রোগী সম্পর্কে বাইরে বলেন না। রোগীকেই বলে থাকেন। সুতরাং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা তার শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমে কথা বলবেন না এটাই স্বাভাবিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। আবার অবনতিও হয়নি। চিকিৎসকদের ভাষায়, তার অবস্থা এখনও ক্রিটিক্যাল। শরীর থেকে রক্তক্ষরণ ও বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম অল্প অল্প কথা বলছেন। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এক্সট্রা কেয়ারে রেখেছেন। তার শরীর বেশ দুর্বল।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ফলোআপ নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড কেন ব্রিফিং করছে না- এমন প্রশ্ন করা হলে তার জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, রোগীর অনুমতি ছাড়া বোর্ড এটি করতে পারে না। প্রাইভেসি সবার আগে।

সুত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বর্তমান হিমোগ্লোবিন ৮.৫০। ডায়াবেটিস ১২ থেকে ১৩-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। কখনও আবার বেশিও হচ্ছে। বুধবার থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অনেকগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময় তার ক্লোনোসকপি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড মলিকিউলার ইমেজিং করা হয়। তবে এসব পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

এর আগে পোস্ট কোভিড সমস্যা নিয়ে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দীর্ঘ ৫৪দিন এভার কেয়ার হাসপাতালে ছিলেন খালেদা জিয়া। বাসায় যাওয়ার ছয় দিনের মাথায় রক্তবমি হওয়ায় গত ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে পুনরায় ভর্তি হন তিনি। সেখানে তার চিকিৎসায় ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।

তার চিকিৎসায় রাজধানীর আরও কমপক্ষে দুটি বড় বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন রয়েছেন। মেডিক্যাল বোর্ডের অন্য চিকিৎসকরা হলেন, প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. আরেফিন আহমেদ, ডা. ফাহমিদা বেগম, ডা. নিশাত ও ডা. মনসিং। এছাড়া শুক্রবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ ডা. একিউ এম মহসিন ও বিএসএমএমইউ এর প্রফেসর ডা. নূর উদ্দিন খালেদা জিয়াকে দেখতে আসেন।

প্রতিদিনই দলীয় সিনিয়র নেতারাও হাসপাতালে দেখতে যান খালেদা জিয়াকে। জানা গেছে, তাদের মধ্যে অনেকে কাচের দরজার বাইরে থেকে সালাম দিতে পারেন। আবার দুই-একজন ভেতরে গিয়ে তাকে দেখতে পারেন।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান প্রতিদিনই হাসপাতালে যান এবং বেশ কিছু সময় অবস্থান করেন। তিনিই মূলত শাশুড়ির দেখাশুনা করছেন। খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালে যান খোঁজ খবর নিতে।

চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার সার্বক্ষণিক হাসপাতাল, দলীয় মহাসচিব ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমকে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন।