সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন।
সোমবার (১ জুলাই) এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) পর্যন্ত যায় শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখানে তারা অবস্থান নেন।
মানববন্ধনে বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, যারা আজকে কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি তাদের হয়তো অল্টারনেটিভ প্ল্যান আছে, কিন্তু তারা আগামী প্রজন্মকে কি জবাব দিবে? তারা হয়তো বলবে আমরা ভীতু-কাপুরুষ ছিলাম তাই আমরা ছাত্র অধিকারের সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। সংবিধানে স্পষ্ট লিখা আছে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। কিন্তু এই পিছিয়ে পড়া জাতি কি মুক্তিযোদ্ধার নাতি? নাকি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, আমরা যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করি আমরা নাকি জামাত-শিবির করি। কারণ হিসেবে দেখানো হয় আমরা রাষ্ট্রীয় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তাহলে আমরা বলতে চাই যে শিক্ষকরা আজকে প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারাও কি জামাত শিবির কিনা?
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানউল্লাহ নূর বলেন, কোটা সমাজের বৈষম্যকে স্পষ্ট করে তুলছে। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল করার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এসকল সরকারী চাকরিতে প্রবেশের পথকে রোধ করছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫৬ বছর পর এসেও কোটাকে বহাল রাখা সামাজিক বৈষম্যকেই ফুটিয়ে তুলছে। আমি চাই দ্রুত আদালত এই রায়কে বাতিল করে কোটামুক্ত চাকরি পরীক্ষার দাবি জানাই।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাদের দাবী পূরণ না হলে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে। একটা গাড়িও চলবে না। এ সময় তারা ‘লাখো শহিদের বাংলায়, কোটা প্রথার ঠায় নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’ একাত্তরের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগানে আকাশ বাতাস কম্পিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সরকারি চাকরিতে ৩০% কোটা বহালের রায় দেন।