ঢাকা, রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১
খেজুর গাছের অযত্ন ও পরিচর্যার অভাবই মূল কারণ

গাছির অভাবে মিলছেনা রস, দাম বৃদ্ধি গুড়েরও

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষীপুর প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২ জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৪২:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
লক্ষ্মীপুর জেলা সহ রায়পুর, কমলনগর, রামগতি, রামগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, সদরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রসের দেখা নেই,  গাছ থাকলেও গাছিদের  আগ্রহ নেই!  শীত মৌসুমের শুরু থেকে চৈত্রের আগ পর্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষরা খেজুর গাছ কাটার পর রস ও মিঠাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। খেজুর রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার। খেজুর রস দিয়ে অল্প সময়ে তৈরি করা হতো বাটালি গুড়, ভীড় মিঠাসহ নানা রকমের মজার মজার খাবার সামগ্রী।
 
খেজুর গাছ কাটার সাথে নিয়োজিতদের এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয়  গাছি। সময় বদলে যাওয়ার সাথে সাথে বদলাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপন প্রণালী। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এখন অপসংস্কৃতির কাছে জিম্মি।
 
 কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এখন গ্রামবাংলার বহু ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস।
 
লক্ষ্মীপুর জেলার এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় বহু খেজুর গাছ ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণেও এ গাছ কমে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের খেজুর রস ও গুড় দুস্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।
 
এক সময় কমলনগর, রামগতি, চররমনী, শাকচর, টুমচর, রায়পুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করত গাছিরা। কিন্তু গত ৯-১০ বছর ধরে দক্ষ গাছির অভাবে খেজুর গাছের রসের সংকট দেখা দেয়ায় রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে খেজুর রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামগঞ্জের মানুষ।
 
শাকচর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজ মাষ্টার বলেন, কয়েক বছর আগেও হায়দারগঞ্জ, চরবংশী, শাকচরে শীত মৌসুমে খেজুর রসের তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েসসহ সুস্বাদু নবান্নের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে উৎসাহ ও আনন্দের মধ্যে নবান্নকে বরণ করত এ অঞ্চলের মানুষরা। এখন আর খেজুর রস না পাওয়ায় নবান্নের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। 
 
 
 
গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত চর বিকন্স এলাকার আঃমতিন বলেন, গ্রামে এখন খেজুর গাছ না থাকায় শীতের আনন্দটাই হারিয়ে গেছে গ্রাম থেকে। অন্য এক কৃষক তাজু বলেন, এখন আমার নিজের খেজুর গাছ না থাকায় পরের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। গাছের মালিককে সপ্তাহে তিন দিন রস দিয়ে বাকি চার দিন আমি নিয়ে বাজারে বিক্রি করি। এতে আমার শ্রমের মূল্য হয় না। কিন্তু মৌসুমি রসের স্বাদ পেতে গাছ কাটা এখনো ছাড়তে পারিনি। ১ হাঁড়ি রসের দাম ১৫০-২০০ টাকা বিক্রি করে থাকি। মিঠাই কেজি প্রতি ২০০ টাকা করে বিক্রি করি। 
 
রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন  বলেন, খেজুর গাছের রস ও মিঠাই এখানকার খুব জনপ্রিয়। কিন্তুু গাছির অভাবে, সচেতনতার অভাবে এই পেশা থেকে কৃষকরা সরে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম ভবিষ্যতে এই স্বাদ আর পাবে না। আমরা খুব শীগ্রই এই নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করবো। তবে কি পরিমান খেজুর গাছ আছে তা যাচাই - বাচাই করা হয়নি কখনো।