দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের আজ (৪ ডিসেম্বর) ৮টি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের তথ্যের প্রাথমিক যাচাই বাছাই শেষে চট্টগ্রামের দুই রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৮জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে।
প্রার্থীদের বাতিল হওয়ার কারন হিসাবে হলফনামায় দেয়া প্রার্থীর মামলা, আয়কর, ঋণ খেলাপি এবং বিল খেলাপিসহ মনোনয়নপত্র বাতিল করা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভুয়া ভোটার, ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য, স্বাক্ষর না করা, মৃত ভোটারের স্বাক্ষর, ভোটার বিদেশে থাকাসহ নানা অনিয়ম ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাতিল প্রার্থীদের বেশিরভাগই ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী। যাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও রয়েছেন প্রভাবশালী একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা। এদের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, সেগুলো মূলত নামসর্বস্ব।
এই আটটি আসন হল— চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসন।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে স্বাক্ষর ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হওয়াসহ এদের সবার মধ্যেই গরমিল পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়ার অভিযোগে এই আসনে জাকের পার্টির নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তজোটের প্রার্থী আমিন রসূলের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)এই আসনে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পক্ষান্তরে পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিদারুল আলম ছাড়াও যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তারা হলেন— স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন ও মোহাম্মদ ইমরান এবং বিএনএফ প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। দলীয় পদের কোন কাগজ জমা দিতে না পারায় বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়ায় এই আসনের অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও মোহম্মদ ইমরানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতার হোসেন আয়করের কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আল মামুন ছাড়াও যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তারা হলেন—জাতীয় পার্টির দিদারুল কবির, ইসলামিক ফ্রন্টের মোজাম্মেল হোসেন, তৃণমূল বিএনপির খোকন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের শহীদুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) এই আসনের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী ও শাহজাহান চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তারাও ১ শতাংশ ভোটার-সমর্থকদের বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে ভুল পাওয়া গেছে তার মনোনয়নপত্রে।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) এই আসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এছাড়া মনোনয়ন বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী কিষানেরও। মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে স্বাক্ষর ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হওয়াসহ এদের সবার মধ্যেই গরমিল পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারা হলেন— মহিবুর রহমান বুলবুল (স্বতন্ত্র) এবং মনজুর হোসেন বাদল (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) এই আসনে খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মৌলভী রশিদুল হকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তার আর্থিক বিবরণী অসম্পূর্ণ ছিল। তবে তাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি দাখিল না করায় তাকে সোমবার পর্যন্ত তা দাখিলের সময় দেওয়া হয়েছে।
৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর শেষ সময় ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
সংসদীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।