![](https://dainikbayanno.com/storage/1719154288bg.jpg)
অবশেষে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য সহজ হচ্ছে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুতি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সেবা। এখন থেকে কেবল শিক্ষা সনদ বা বৈধ কাগজ থাকলেই এই সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সংস্থাটি।
এতে করে সরে যাবে রোহিঙ্গা সন্দেহের তীরের সরি।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য সুপারিশ পাঠাতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটির সচিব শফিউল আজিম।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকার যেসব নাগরিকের অ্যাকাডেমিক সনদ বা বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের মতো একই ক্যাটাগরিতে না ফেলে তাদের ভোটার নিবন্ধন সহজ করতে হবে। প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত কমিটির পুনর্গঠন ও তাদের কার্যপরিধি হালনাগাদ করতে হবে। এজন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সুপারিশসহ দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন ইসি সচিবালয়ে পাঠাবেন।
রোহিঙ্গারা সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি উপজেলা/থানাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে ইসি।
ওই ৩২টি উপজেলা/থানার ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘বিশেষ কমিটি’ গঠন করা হয়। ওই কমিটির যাচাই-বাছাই এবং সুপারিশ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়।
বিশেষ এলাকাগুলো- কক্সবাজার সদর উপজেলা, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।
এছাড়াও রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটির কাজও নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি।
এক্ষেত্রে বিশেষ কমিটিকে বলা হয়েছিল-
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকার ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাগরিক সনদ (রঙিন ছবিযুক্ত), তার বাবা-মা/স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি, বাবা-মায়ের নাগরিক সনদ, নিকাহনামা/কাবিননামা (বিবাহিত হলে), পাসপোর্ট (যদি থাকে), পাবলিক পরীক্ষার সনদ এবং অনলাইন জন্ম/মৃত্যু সনদের ভেরিফাইড কপি যাচাইপূর্বক গ্রহণযোগ্য হবে।
স্থানীয় মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক সম্প্রতি প্রদত্ত জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের মূলকপি, স্মারক নং ও তারিখ সম্বলিত প্রত্যয়নপত্র, রঙিন ছবিযুক্ত ও ছবির উপর কর্তৃপক্ষের সিলমোহর সম্বলিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য ফরমের পাশাপাশি ভোটারযোগ্য নাগরিকদের অনলাইন নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) পূরণ এবং পূরণ করা ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দাখিল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত বিশেষ তথ্য ফরম আব্যশিকভাবে পূরণ করে দাখিল করতে হবে;
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান/সাধারণ মেম্বার/সংরক্ষিত মেম্বার/চৌকিদারের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার হিসেবে বিশেষ এলাকাসমূহে বা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে নিবন্ধিত না হতে পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য ফরমে উল্লিখিত যাবতীয় তথ্যাদি এবং তথ্যাদির স্বপক্ষে প্রমাণক হিসেবে দাখিলকৃত ডকুমেন্টস ‘বিশেষ কমিটিকে’ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে হবে। বিশেষ কমিটি’ বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এসব ছাড়াও জমির দলিল, চাচা, মামা, খালা, ফুপি, নানা-নানি, দাদা-দাদির কাগজপত্রও জমা দিতে হত। ফলে নিজ দেশের নাগরিক হয়েও রোহিঙ্গা নয়, এই প্রমাণ দিতে বিড়ম্বনায় পড়েন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা।
খোদ ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নির্দেশনার পর গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নাগরিকদের ভোগান্তির কোনো সীমা নেই। এনআইডি সেবা তো দূরের কথা ভোটার হতে গেলেও রোহিঙ্গা সন্দেহে পড়তে হয় তাদের। তবে শিক্ষা সনদ বা বৈধ কোনো কাগজের ভিত্তিতে এই সেবা দেওয়া হলে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন চট্টগ্রামবাসী।