ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

চলতি অর্থবছরেই বিসিকের ছয় শিল্পনগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:২০:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

 

চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ছয়টি শিল্পনগরী নির্মাণ প্রকল্প শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। কিছু জায়গায় প্লটও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটিতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় দুই লাখ মানুষের।

 

বিসিক জানিয়েছে, এ অর্থবছরে সমাপ্ত শিল্পনগরীগুলো হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক, রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী-২, ভৈরব বিসিক শিল্পনগরী, নরসিংদী বিসিক শিল্পনগরী, বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী এবং রাউজান বিসিক শিল্পনগরী।

এ বিষয়ে বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ছয়টি প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে। চলতি বছরের বাইরে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু আর্থিক জটিলতা থাকায় সেটা সম্পন্ন হচ্ছে না। বাকিগুলো সময়মতো শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, এসব বড় শিল্পনগরীর বেশিরভাগ ৪শ একর বা তার চেয়ে বড়। প্রতিটিতে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এসব শিল্পনগরীতে গড়ে উঠবে শতাধিক প্রতিষ্ঠান, যা দেশের সার্বিক শিল্পখাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

বিসিক প্রকল্প শাখা থেকে আরও জানা যায়, বর্তমানে বিসিকের ১৩টি শিল্পনগরী নির্মাণ প্রকল্প চলমান। আগামী অর্থবছরে আরও ১৫টি শিল্পনগরী নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এলাকার মতো কিছু বিশেষায়িত শিল্পনগরীও রয়েছে।

এছাড়া গত অর্থবছরে (২০২০-২১) বিসিক পাঁচটি শিল্পনগরীর কাজ শেষ করেছে। যেগুলো এখন উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী, জামালপুর বিসিক শিল্পনগরী, ঢাকা চামড়া শিল্পনগরী, চুয়াডাঙ্গা বিসিক শিল্পনগরী ও অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) শিল্পপার্ক।

আতাউর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, সারাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ৩০টি শিল্পনগরী গড়ে তুলতে চায় বিসিক। ২০৪১ সালের মধ্যে বিসিকের শিল্পনগরীর সংখ্যা হবে ১০০টি। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিসিক।

কেমন হচ্ছে এসব শিল্পনগরী

বর্তমানে সারাদেশে বিসিকের ৭৬টি শিল্পনগরী রয়েছে। যেগুলো অনেক আগে নির্মাণ করা ও আয়তনে বেশ ছোট। নতুনভাবে নির্মিত শিল্পনগরীগুলো ৪শ একর বা তার চেয়ে বড় করে বানানো হয়েছে। এজন্য ৪০ হাজার একর জমি নিচ্ছে বিসিক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা খরচ করছে সংস্থাটি। দেশে বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কারখানা না গড়ে তুলে এসব শিল্পনগরীতে কলকারখানা নিয়ে আসতে চায় বিসিক।

এদিকে, এসব শিল্পনগরীতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পাঁচ বছরে পাঁচটি সমমানের কিস্তিতে প্লটের দাম পরিশোধের সুযোগ রেখেছে বিসিক। উদ্যোক্তাদের জমিগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯৯ বছরের জন্য। এছাড়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারঘোষিত বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন তারা। পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে এসব শিল্পনগরীতে গড়ে তোলা কলকারখানা ও এর যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার কাগজপত্র অনুমোদন দেবে সরকারি এই সংস্থাটি।

এসব শিল্পনগরীতে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প ৪০ শতাংশ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪০ শতাংশ প্লট বরাদ্দ পাবেন। বাকি ২০ শতাংশ প্লট দেওয়া হবে কটেজ, মাইক্রো ও স্মল (সিএমএস) উদ্যোক্তাদের। বিশেষায়িত এসব শিল্পনগরীতে এ খাতের জন্য থাকবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এছাড়া স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ডিসির কাছে শিল্পনগরী হস্তান্তরের পরেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ পাবেন।

শিল্পনগরীতে আগ্রহী উদ্যোক্তারা

এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর কাজ শেষের পথে। ৪শ একরের এই শিল্পনগরী যমুনা সেতু থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা-সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতে শিল্পপ্লট রয়েছে ৪৮৭টি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই শিল্পনগরীতে পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠান কারখানার জন্য প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে কাজী ফার্ম ১০ একর, মতিন স্পিনিং মিল ২০ একর ও ওয়ান ফার্মা ১০ একর জায়গার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছে। এছাড়া সেখানে কারখানা করতে চায় মন্ডল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবং এফএম প্ল্যাস্টিকস।

সিরাজগঞ্জে বিসিকের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, ২০ শতক থেকে শুরু করে ২০ একর পর্যন্ত শিল্পপ্লট রয়েছে এ শিল্পনগরীতে। এরই মধ্যে পাঁচটি প্রস্তাবনা জমা পড়েছে, আরও অনেক কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করছে। আমরা চাই, বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানে তাদের কারখানা গড়ে তুলুক।

তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারে এ শিল্পনগরীর সবটুকু জায়গা ব্যবহার হোক সেটা বিসিক চায়। এখানে সড়ক, রেল ও নৌ—তিন পথেই যোগাযোগ রয়েছে। এই শিল্পনগরীতে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তা ও ড্রেনেজের ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। এছাড়া প্রচুর গ্রিন স্পেস, ডাম্পিং ইয়ার্ড ও ডিপ টিউবওয়েলের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিকভাবে একটি ২০ একরের লেকও রয়েছে।

শিল্পনগরীতে জমির দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিন লাখের মধ্যে প্রতি শতক জমি পাবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। প্রকল্প চূড়ান্ত হলে দাম সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।