ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

চিড়া-মুড়ি-কম্বল নিয়ে রংপুরে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৭ অক্টোবর ২০২২ ১১:৩৮:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

 

 

আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর দুই দিন আগে ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধের দাবিতে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এই ধর্মঘট।

 

পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আসতে পারে— চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার অভিজ্ঞতায় এমন আশঙ্কা ছিল বিএনপি নেতা-কর্মীদের। এ কারণে তারা আগেভাগেই রংপুর আসতে শুরু করেছেন।

 

 

শনিবার কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে রংপুর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন ধার্য রয়েছে। দিনটি ঘিরে নেতা-কর্মীদের নানা প্রস্তুতিও নিতে দেখা গেছে। যেকোনো উপায়ে গণসমাবেশ সফল করতে তাদের অনেকে ইতোমধ্যে রংপুরে অবস্থান করছেন।

 

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে এসে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা । তারা বলছেন, সরকার এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় গণসমাবেশ ঠেকাতে পরিবহন ধর্মঘটের নামে বাধা সৃষ্টি করেছিল। একই অবস্থা এখন রংপুরেও বিরাজ করছে। ধর্মঘটের বিষয়টি মাথায় রেখে অনেকে আগেই সমাবেশস্থলে এসেছেন।

 

 

ঈদগাহ মাঠে কথা হয় মোস্তাফিজুর রহমান ও রহিদুল ইসলাম নামে বিএনপির দুই কর্মীর সঙ্গে। তারা দুজন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রাম থেকে সমাবেশস্থলে এসেছেন। সঙ্গে চিড়া-মুড়ি-কম্বলও নিয়ে এসেছেন তারা।

 

রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হামরা জানি সরকার বাধা দেবে, ওই তকনে আগোতে চলি আসছি। বুধবার চাচাক নিয়্যা পাটগ্রাম থাকি ট্রেনোত করি রংপুর আসছি। আইতোত স্টেশনোতে ঘুমাইছি। আইজ সকালে হাঁটতে হাঁটতে মাঠোত চলি আসছি। হামার সাথে চিড়া, মুড়ি, কম্বল সোগে আছে। কষ্ট হইলেও সমাবেশ দেখি তারপর বাড়ি যামো।’

 

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাস বন্ধের আশঙ্কা থেকে আমরা তিনদিন আগেই রংপুর এসেছি। আমাদের মতো আরও অনেকেই আসছেন। যত সমস্যাই হোক আমরা রাতে মঞ্চের আশপাশে কম্বল বিছিয়ে ঘুমাব। সমাবেশের মাঠেই থাকব।’

 

 

 

তাদের মতো আরও অনেকেই বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে এখন রংপুরে অবস্থান করছেন। মাঠে কথা হয় দিনাজপুর থেকে আসা মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের অন্তত ২০ জন একসঙ্গে রংপুরে এসেছেন। কেউ হোটেলে উঠেছেন। আবার কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। রাতের মধ্যে দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরও অনেকেই রংপুরে আসবেন।

 

রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, ‘সমাবেশ হবে শনিবার, অথচ দলের নেতা-কর্মীরা বুধবার থেকেই রংপুরে আসতে শুরু করেছেন। সরকার যেভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও সভা-সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করছে, তার প্রতিবাদ জানাতে তৃণমূল প্রস্তুত। বিভাগীয় এই গণসমাবেশ সফল করতে দলের অনেক কর্মী ও সমর্থক নিজের জমি পর্যন্ত বন্ধক রেখে, কেউবা গরু-ছাগল বিক্রি করে এখানে ব্যয় করছেন। এই ভালোবাসা দেশের জন্য, বিএনপির জন্য। কারণ বিএনপি বর্তমানে যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তা গণমানুষের দাবিতে রূপ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, শনিবার রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় গণজমায়েত হবে।’   

 

 

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে রংপুরে পৌঁছেছেন রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ। সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা নাকি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় খেলা দেখাবেন। আমরা তো খেলা দেখছি। আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরে আমরাও খেলা দেখাব। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ হবে এদিন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে, সারা দেশের মানুষ বিএনপির সঙ্গে আছে।’

 

রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম, সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ এর আগেও সেটা হয়েছে। এ কারণে সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা রংপুরে আসতে শুরু করেছেন। প্রয়োজনে হেঁটে, বাইসাইকেলে কিংবা ভ্যানে করে হলেও সমাবেশে এসে যোগ দেবেন তারা।’

 

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ এবং ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এর ধারাবাহিকতায় আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশের আয়োজন করছে তারা।