ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

জাতির জনক দেশে ফিরেছিলেন এই দিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১০ জানুয়ারী ২০২২ ১২:২১:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ১০ জানুয়ারি। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতি স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পায়নি। অবশেষে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ পায়।

 

জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনগামী একটি বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। 

সকাল ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। এরপর ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু।

১০ তারিখ সকালে প্রথমে তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তিনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।

 

এদিন দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছান। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ প্রতিপাদ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। 

বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের শহিদ মনিরুল আলম মিলনায়তন থেকে সব টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানে বাবা ও মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করা হবে। আলোচনা পর্বে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সম্পর্কে আলোচনা করবেন বিশিষ্ট আলোচকরা।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। বেলা ১১টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।