ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জেটি নির্মাণ না করেই ৫০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৮ জানুয়ারী ২০২২ ১১:৪১:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর নৌঘাটে জেটি নির্মাণ না করেই ৫০ লাখ টাকা বিল তোলার অভিযোগ উঠেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কতিপয় প্রকৌশলীর যোগসাজসে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর জুলাই মাসে সালুটিকর নৌঘাটে একটি জেটি নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ ৩৯ হাজার ১৮৫ টাকার কাজ পায় ঢাকার মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ অনুযায়ী, নৌঘাটে আগে থেকেই স্থাপিত পল্টুনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ৮০ ফুট লম্বা স্টিলের জেটি নির্মাণের কথা থাকলেও মাত্র ৫০ ফুটের একটি স্টিল অবকাঠামো নির্মাণ করে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

এছাড়া জেটি থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত ৯০ ফুট দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ সড়ক আরসিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করার কথা ছিল। এই অ্যাপ্রোচ  সড়কটি নির্মাণ না করেই প্রকল্পের সমাপ্তি টানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে নৌজেটিটি কোনো কাজেই লাগছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ ফুট দীর্ঘ জেটি মূল সড়ক থেকে অনেক দূরে। যে কারণে অ্যাপ্রোচ সড়ক ছাড়া এই জেটি ব্যবহারের কোনো সুযোগই নেই। 

এদিকে কার্যাদেশে থাকা তিনটি কাজের অন্যতম জেটির দুই ধারে ৮০ ফুট দীর্ঘ নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ব্লক কার্পেটিং ও গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা। বাস্তবে এর কোনো কাজই করা হয়নি। অথচ কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে দাবি করে ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি জানাজানি হলে সরেজমিন তদন্তের জন্য সম্প্রতি কারিগরি টিম পাঠায় বিআইডব্লিউটিএ।

 

তদন্ত দলের সদস্য সুমন চন্দ্র সরকার। তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএর কতিপয় অসাধু প্রকৌশলীর সহায়তায় এ দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছে। এ প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশলী রবিউল ও মহসিন। তারা শতভাগ কাজ সম্পন্নের প্রতিবেদন দেন কর্তৃপক্ষের কাছে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ২৮ জুন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সব বিল পরিশোধের আদেশ জারি করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমুদয় বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী রবিউল, মহসিন ও জহিরুল ইসলাম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে কাজ না করেই বিল তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না এলাকাবাসী। 

স্থানীয় নন্দিরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল বলেন, বন্যার অজুহাতে সে সময় কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। ঠিকাদার সে সময় বলেছিলেন, শুকনো মৌসুমে বাকি কাজ সম্পন্ন করে দেওয়া হবে। কিন্তু এর আগেই কাজ শেষের ভুয়া প্রতিবেদন জমা দিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।

এলাকাবাসী জানান, নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য গার্ডওয়াল নির্মাণ না করায় পুরো প্রকল্পই এখন ঝুঁকির মুখে। যেকোনো সময় ভূমিধসে স্টিলের জেটি ও পল্টুন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, সালুটিকর নৌঘাটের মাধ্যমে জাফলং, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ থেকে উত্তোলিত বালু-পাথরের সিংহভাগ সারাদেশে পাঠানো হয়।