ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নাগেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা, বেরিয়ে পড়েছে রড। নেই ভালো টয়লেটের ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন আগে নির্মিত টিনশেড ঘরটির অবস্থা আরো করুণ। ভেঙ্গে গেছে জানালা-দরজা। খসে পড়ছে দেয়ালের ইট। এতে আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এদিকে বর্ষা মৌসুমে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। আবার তীব্র তাপদাহে গরমে অতিষ্ঠ হয় শিক্ষার্থীরা। এমন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠদানের অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে।
শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের নাগেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে ১৪৫ বছর আগে। কিন্তু নির্মানের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় পাঠদান কক্ষের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে বিদ্যালয়টিতে ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৮৮১ সালে ৭৪ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। যার বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন একাডেমিক ভবণ বরাদ্দ পায়নি বিদ্যালয়টি। শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষে একাধিকবার ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করা হলেও কোন ফল আসেনি। ১৯৮০ সালে বিজ্ঞান ভবণ ও ১৯৯৭ সালে ফ্যাসেলিটিজ বিভাগ থেকে একটি ভবণ নির্মাণ হলেও তা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাঠদান কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী শিক্ষকের কক্ষ ও অফিস কক্ষ সহ মোট ১১টি কক্ষ রয়েছে। তবে সবগুলো কক্ষেরই বেহাল দশা। দেয়াল ও ছাদে অধিকাংশ জায়গায় ফাটল ধরেছে। ধষে পড়তে পাড়ে যে কোন সময়। আর ঘটতে পারে বড় ধরণের দূূর্ঘটনা। ঝুঁকির মধ্যেই পরিচালনা করতে হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।
নবম শ্রেণীর ছাত্রী পাভিনা খাতুন জানান, আমরা অনেক ঝুঁকি আর ভয়ের মধ্যে ক্লাস করি। মাঝে মধ্যে ছাদ থেকে বালি-খোয়া পড়ে আমাদের শরীরে। বিদ্যালয়টি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিদ্যালয় ভবনগুলো যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে ক্লাশ করি। অন্যদের বিদ্যালয় কতো সুন্দর। আমাদের বিদ্যালয়টি মেরামতসহ নতুন ভবন করা দরকার।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক তিতাস কুমার বলেন, ১৪৫ বছরের বিদ্যালয়টির অবস্থা খুবই খারাপ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন বরাদ্দ জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই আমি উপর মহলের কাছে নতুন ভবনের দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল হোসেন বলেন, অনেক আগে থেকেই টিনসেড ঘরসহ ভবন দুটি ঝুঁকিপূর্ণ। একটি একাডেমিক ভবনের জন্য দীর্ঘ দিন বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবণে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি। এছাড়াও টিনসেডের ঘড়টি যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন বরাদ্দ জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুলতান আলী বলেন, বিদ্যালয়টি অনেক পুরাতন। আমার জানামতে বিদ্যালয়টিতে অবকাঠামোগত তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভবণ নির্মাণের চাহিদা দিলে কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জোর সুপারিশ করবো। তবে বিদ্যালয়ে ছোট খাট কোন মেরামতের দরকার হলে সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলার নাগেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দ্বায়িত্বে থাকা শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ভবন বরাদ্দের চাহিদা দিলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিব এবং সার্বিক সহযোগীতা করবো।
বায়ান্ন/এসএ