অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরও দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি থামেনি বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে। টিআইবির মতে, স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী বা দলীয়করণের পরিবর্তে এটি আরেকটি গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার (১৮ নভেম্বর) "নতুন বাংলাদেশ: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের পরবর্তী ১০০ দিন" শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম।
টিআইবি উল্লেখ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে দায়িত্ব থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করা হয়নি। দায়িত্বশীলদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও অ্যাডহক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা সরকারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতার বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও দায়িত্ব বণ্টনে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রমে দক্ষতার অভাব স্পষ্ট। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে, যা নীতিনির্ধারণে অস্থিরতার প্রতিফলন।
গবেষণা অনুযায়ী, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। এ ছাড়া সহিংসতার কারণে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, এবং নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যও হুমকির মধ্যে পড়েছে।
ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিয়েছে টিআইবি। তাদের মতে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকারে ব্যর্থতা এবং পরবর্তী অপতৎপরতার কারণে এই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এর ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আমরা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
টিআইবির পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ। এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ভবিষ্যতে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। সুশাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
বায়ান্ন/এএস