ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার রাস্তা গুলো বেহাল, ভোগান্তি চরমে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৯ জুন ২০২২ ০৭:০০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার ঢালাই উঠে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে সড়ক গুলো। এতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন গাড়ি চালকরাসহ পথচারী ও জনসাধারণ। এনিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। 
 
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা কার্যালয়ের সূত্র মতে, পৌরসভায় মোট ১৩৫ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা রয়ে গেছে। 
 
পৌর শহরের ১২ টি ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলেও এসব রাস্তার প্রায় ৮০ শতাংশরই দশা বেহাল।
 
চৌরাস্তা থেকে কালিবাড়ী হয়ে সত্যপীরব্রীজ পর্যন্ত সড়ক, চৌরাস্তার নরেসচৌহান সড়ক থেকে শুরু করে সেনুয়া পর্যন্ত, জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের গেটের সামনের সড়ক, শহরের প্রাণকেন্দ্র সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে অবস্থিত জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের সড়ক, হাজীপাড়া, আশ্রমপাড়া, শাহাপাড়া, ঘোষপাড়া, গোয়ালপাড়া, নিশ্চিন্তপুরসহ আরও বেশ কয়েকটি মহল্লার প্রধান প্রধান সড়ক গুলোর অবস্থা বেহাল। 
 
এসব রাস্তা দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কার না করায় যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা গুলোর পিচের ঢালাই ও ইট উঠে গিয়ে যেখানে সেখানে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বড় বড় খানাখন্দ ও গর্ত গুলোতে হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় গাড়ি পাল্টি খেয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন অনেকে। এছাড়াও পানি জমে থাকার কারণে রাস্তায় চলাচলকারীদের শরীরে কাদা পানি ছিটকে কাপড়-চোপড় নষ্ট হচ্ছে। 
 
এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গাড়িচালক, পথচারীসহ স্থানীয়রা। তারা স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে এসব রাস্তা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।  
 
পৌরসভার ২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. তারাবুল ইসলাম বলেন, ' হ্যাডস এর মোড় থেকে গোয়ালপাড়া শাপলা স্কুল পর্যন্ত রাস্তাটির বেহাল দশা। ২০০২ সালে একবার এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল। রাস্তার কাজ হওয়ার কিছুদিন পরেই আবার রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তারপর থেকে এই রাস্তার আর কোন কাজ হয়নি। বর্ষা এলেই এই রাস্তার যেখানে সেখানে হাটু পরিমাণেরও বেশি পানি জমে থাকে। রাস্তাটি ঠিক করার বিষয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরকে বারবার বলা হলেও এ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। তাদের বলতে গেলে তারা বলেন বরাদ্দ না থাকলে কি আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে রাস্তা সংস্কার করবো। রাস্তাটার এমন অবস্থা হয়েছে যে এ রাস্তা দিয়ে গাড়ি-ঘোড়া ঠিক মতো চলতে পারে না। এমনকি হাঁটাচলাও করা যায় না।, 
 
পৌর শহরের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মানিক মিয়া বলেন, 'পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে-সেখানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই এগুলোতে পানি জমে থাকে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা যায় না। রিক্সা, সাইকেল ও গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। তাই আমি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করে ঠিক করার দাবি জানাচ্ছি।,
 
৫ নাম্বার ওয়ার্ডের হাজীপাড়ার বাসিন্দা মো. খাদেমুল ইসলাম বলেন, 'শহরের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠ। আর এখানে অবস্থিত জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের পেছনে রাস্তাটির পিচ ও ইট উঠে যাওয়ার কারণে গর্ত হয়ে গেছে। এই গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয় ও যানজট সৃষ্টি হয়। এগুলো ঠিক করলে আমাদের দুর্ভোগ কমতো।
 
মো. অলিউল ইসলাম নামে এক অটোচালক বলেন, 'আমি প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে অটো দিয়ে যাত্রী উভাই ও ভাড়ামাড়ি। পৌরসভার প্রায় সব রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। এসব রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালালে ঘন ঘন গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ঠিকমতো গাড়ি চালানো যায় না। গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়। অনেক সময় গাড়ি পালটি খেয়ে উল্টেও যায়।
 
পৌরসভার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা ও মেরামতের বিষয় জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা এলজিএসপি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়তো আগামী বছরের জানুয়ারিতে পাবো এবং অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারিতেই এর কাজ শুরু করতে পারবো। এই প্রকল্পে থাকছে, রাস্তা, ড্রেন, লাইটিং ব্যবস্থা ও ফুটপাত তৈরি। এই প্রকল্পে আমরা মেইন মেইন কিছু রাস্তা সংস্কার করার জন্য অন্তর্ভুক্ত করেছি।,
 
এছাড়াও তিনি বলেন, এর আগের মেয়র বিএনপি'র ছিলেন। তাই তিনি রাস্তাগুলো তেমনভাবে সংস্কার করতে পারেননি। আমি মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রাস্তাগুলো সংস্কার করার। টেন্ডার ও বাজেট এলেই ১২টি ওয়ার্ডেরই রাস্তাঘাট নতুন করে তৈরি করা হবে এবং মানুষ সুন্দর ও ভালো ভাবে চলাচল করতে পারবে।,