ঢাকা, শনিবার ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯শে মাঘ ১৪৩১

ড. ইউনুসের আমলে হাসিনার বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি কেন প্রশ্ন রিজভীর

রিয়াদ হাসান | প্রকাশের সময় : শনিবার ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ০৩:৩৭:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

শেখ হাসিনার শাসনামলের মত বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি ড. ইউনুস সাহেবের আমলে ঘটবে কেন এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চলছেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, শঙ্কা আমাদের দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লায় যুবদলের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মৃত অবস্থায় ফিরে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডক্টর ইউনুস সাহেবের আমলে এই ঘটনা ঘটবে কেন? ড. ইউনুস সাহেবকে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো অত্যন্ত তাকে পছন্দ করে এবং এদেশের মানুষও তাকে পছন্দ করে।

তারা মনে করে তিনি দেশের একজন গুণী মানুষ যিনি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন তার সময়ে যদি শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দুষকর্ম এবং অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো হোঁচট খাবে জনগণ।

শনিবার (১ ফেব্রয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ভাসানী মিলনায়তনে ঠিকানা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পরিচিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কুমিল্লায় যুবদল নেতাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, যদি ওই ছেলেটি অপরাধী হয় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়া যেত কিন্তু গ্রেপ্তার করে ভয়াবহ টর্চার করে মেরে ফেলে বাবা মার কাছে ফেরত দেওয়া এইটা এই আমলে হবে কেন? যখন একটি ভয়ংকর দানব রক্ত পিপাসু সরকারকে এই দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে দেশের জনগণ সেই দেশে কেন আবার শেখ হাসিনার শাসনামলের মত বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি হবে? বুঝলাম ছেলেটি খারাপ অপরাধী সেই অপরাধের বিচার করার দায়িত্ব তো আদালতের।

তিনি আরও বলেন, ডক্টর ইউনুস সাহেবের সরকারকে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সমর্থন করেছে তিনি নির্বাচিত না হলেও সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার তার সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন রয়েছে কিন্তু তার সরকারের আমলে যদি হাসিনার আমলের পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো এই যে এত রক্তাক্ত আন্দোলন রাজপথে রক্তের আলপনা আহাদের মত পাঁচ বছরের শিশু মুগ্ধর মত একটি তরুণ প্রাণ আবু সাঈদ নির্ভীক চিত্তে নিজের শার্টের বোতাম খুলে শেখ হাসিনার পুলিশের গুলি বরণ করেছে এই যে আত্মদান এই আত্মদান তো একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেল।

এত বড় একটা পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে যে একটা আশা জেগে উঠেছিল সেই আশা যাতে আরো বেশি ফলপ্রসু হয় সেই প্রত্যাশাতেই তো এদেশের জনগণ গণতন্ত্রগামী রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে।মানুষ প্রত্যাশা করছে অবাধ সুষ্ঠু ইনক্লুসিভ একটি নির্বাচনের জন্য।

রিজভী বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি দেশ থেকে ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবিরাম অপপ্রচার চালাচ্ছে। এইরকম একটি ভয়ংকর অত্যাচারী লুণ্ঠনকারী মাফিয়া সরকারের পতনের পর সেই সরকারকে এবং সেই সরকারের কেন পতন হলো এই আফসোস এবং এই অনুসূচনায় ভারতের কিছু মিডিয়া আমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে এটা নিন্দনীয়। এই যে বৈদেশিক ভাবে যে চক্রান্ত হচ্ছে এইগুলোকে মোকাবেলা করেই তো আমাদের সঠিক পথে চলতে হবে। যদি সঠিক পথে চলতে ব্যর্থ হয় তাহলে তো ওরা আরও সুযোগ নিবে।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্কে ভারতের পশ্চিম বাংলার একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা নানা ধরনের অপমানজনক মন্তব্য করে প্রতিবেদন করছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী একটি গর্বিত সেনাবাহিনী আমরা দেখেছি যখনই যাই হোক কিন্তু চূড়ান্তভাবে জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীর সম্পর্কে ভারতের পশ্চিম বাংলার একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা নানা ধরনের অপমানজনক মন্তব্য করে প্রতিবেদন করছে। কারণ কি?

কারণ এইটাই তাদের পছন্দমত যে সরকারটি ছিল সেই সরকারটি নেই। তারা এক ধরনের অনুসূচনায় এক ধরনের বেদনায় এমন এক মনোবেদনায় ভুগছেন যার কারণে তারা ক্রমাগতভাবে মিথ্যা বয়ান তৈরি করে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি তো অনেক ভালো স্বস্তি শান্তি এখানে বিরাজ করছে। কিন্তু এইটা তারা পছন্দ করছে না। কারণ শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারত।

তিনি আরও বলেন, ভারত তো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা যেমন তাদের সমালোচনা করি আবার তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের জন্য আমরা তো তাদের প্রশংসাও করি। আনন্দবাজার পত্রিকা তো নিজেকে সেকুলার মনে করে কিন্তু আমি ওখানে দেখেছি তাদেরও অত্যন্ত গভীরে কোথায় যেন একটা সাম্প্রদায়িকতা কাজ করে। হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ ভারত নয়।

এসময় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-প্রচার আসাদুল করিম শাহিন।

বায়ান্ন/আরএইচ/একে