রাজধানীর বাজারগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সরবরাহ ঘাটতির ফলে অনেক দোকানে তেল মিলছে না, আর যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেও নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, আসন্ন রমজান উপলক্ষে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর হাজীপাড়া বউ বাজার, রামপুরা ও মালিবাগ এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মুদি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ একেবারে কম। কিছু দোকানে থাকলেও সেটি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
রামপুরার ভাই ভাই স্টোরের মালিক জামাল হোসেন বলেন, "আগে নিয়মিত তেল পেতাম, কিন্তু এখন কোম্পানিগুলো চাহিদার তুলনায় অনেক কম সরবরাহ করছে। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি।"
বাজারের একাধিক খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করেছেন, কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে একই কৌশল অবলম্বন করে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এবারও রমজানের আগে একইভাবে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।
মালিবাগ বাজারের এক ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "কোম্পানিগুলো রমজানের আগে দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ সীমিত করেছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মজুত করছে, ফলে সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। এটি এখন ওপেন সিক্রেট।"
তেল সরবরাহকারী একাধিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো লোকসান এড়াতে নতুন দাম নির্ধারণের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও সরকার তেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে, এতে প্রতি কেজি তেলে ১০ থেকে ১১ টাকা শুল্ক কমানো হয়েছে, তবুও বাজারে আমদানি বাড়েনি বরং সংকট তৈরি হয়েছে।
সয়াবিন তেলের পাশাপাশি চালের দামও এখনও কমেনি। বরং কিছু কিছু জাতের চালের দাম আরও বেড়েছে। ৬২ টাকার কমে মোটা চাল এবং ৮০ টাকার নিচে কোনো সরু চাল মিলছে না।
তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো, ডিম ও সবজির দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। বর্তমানে:
- ফুলকপি ও বাঁধাকপি: ২০-২৫ টাকা (প্রতি পিস)
- মুলা: ২০-৩০ টাকা (প্রতি কেজি)
- শালগম: ৩০-৪০ টাকা (প্রতি কেজি)
- শিম: ৩০-৫০ টাকা (প্রতি কেজি)
- টমেটো: ২০-৪০ টাকা (প্রতি কেজি)
- বেগুন: ৫০-৬০ টাকা (প্রতি কেজি)
- পেঁপে: ৩০-৪০ টাকা (প্রতি কেজি)
- লাউ: ২০-৪০ টাকা (প্রতি পিস)
এছাড়া, মৌসুমের নতুন দেশি কাঁচা মরিচ বাজারে আসায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আলুর কেজি ২০-৩০ টাকা ও পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা কম রয়েছে, প্রতি ডজন ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৯০-২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
সয়াবিন তেলের সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন সাধারণ ভোক্তারা। অনেক খুচরা বিক্রেতা বোতলজাত তেলের বিকল্প হিসেবে খোলা তেল বিক্রি শুরু করেছেন। তবে অনেকেই নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য সীমিত পরিমাণে তেল সংরক্ষণ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃত্রিম সংকট নিরসনে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তেলের মজুত ও বিতরণে নজরদারি বাড়ানো না হলে আসন্ন রমজানে তেলের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে।
বায়ান্ন/আরএস