লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের কয়েকটি দেয়ালে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ লেখা পোস্টার লাগানোর অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) গভীর রাতে পোস্টের গুলো লাগানোর হয়। শুক্রবার (৩১জানুয়ারি) সকাল থেকে পোস্টার গুলো দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের জেবি রোড, বাগবাড়ি, মেঘনা রোড, রেহান উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক, উত্তর তেমুহনী, ঝুমুরসহ কয়েকটি এলাকার দেয়ালে এসব পোস্টার দেখা গেছে। পোস্টার গুলোর নিচে ‘আশরাফুল হাসান সাকিব ও লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগ’ লেখা আছে। জেলার পলাতক ছাত্রলীগ নেতারা এসব পোস্টার লোগানোর সাথে জড়িত রয়েছেন। পোস্টের গুলো লাগানোর পর সেগুলো নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। তারা নিজেদের ফেসবুকে ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ খুব শিগগিরই ফিরছে’ বলেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী মুঠোফোনে জানান, বর্তমান সরকার তাদের কোনো কার্যক্রম প্রকাশ্যে করতে দিচ্ছে না। তাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের অবস্থান জানান দিতেই লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে এ ধরনের পোস্টার লাগিয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মাঠে নেমে প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ডাক দেন তারা।
এদিকে গত কয়েকদিন আগে জেলা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ও রাস্তায় ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ লিখতেও দেখা যায়। এছাড়া সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও জেলা সমন্বয়কের বাড়ির আশপাশের দেয়ালে বিভিন্ন লেখা লিখে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুর সদরের টুমচরের শিমুলতলী এলাকায়
স্থানীয় বিভিন্ন দেয়ালে লেখা হয় ‘মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও’, ‘ছাত্রলীগ আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘মুক্তির ডাক ৭১, মুজিববাদ’, ‘শেখ হাসিনা আবার আসবে’।
অপর দিকে অনেক দিন নিরব থাকলেও সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া নিজের ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে আসছেন। ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গ্রেপ্তার নেতাদের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘এ আধার কেটে যাবে’। ৩০ জানুয়ারি ছাত্রলীগের কর্মসূচির স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন, ‘এবারের সংগ্রাম, গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম’। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুকে ও বিভিন্ন দেয়ালে এ ধরনের প্রচারণার তীব্র সমালোচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা বলছেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার মতো বিভিন্ন অপকর্মের হোতা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও ভয়ে পালিয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসাইন বলেন, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে হুংকার দিচ্ছেন। তারা রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড চালাতে চাচ্ছে। রাজপথে তারা নামলে তখনই বোঝা যাবে- কাদের অবস্থান কোথায়। তারা এসব করে জনমনে আবার আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। তাদের উদ্দেশ্য কোনোভাবেই সফল হবে না। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে ছাত্র-জনতা প্রস্তুত।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে খুঁজে আইনেন আওতায় আনবেন এমনটাই দাবি তাদের।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোন্নাফ বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা তৎপর রয়েছি। যারা এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাদেরকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে
