নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে চলছে তুঘলকি কর্মকাণ্ড। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলার ৫ থানা ও ৫ পৌরসভার বিএনপির নতুন কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে। এমনকি জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন একটি পৌরসভা কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন। তিনি নিজেই সই করে সেই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই কমিটি গঠনকে ‘সুপার সনিক গতির কমিটি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কই একটি পৌর কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন। এটি দেশে বিরল। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সভা বা মতামত না নিয়েই টেবিল কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। অপরদিকে জেলা ও মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির রাজনীতি এখন এন্টি তারেক রহমান গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। তারা বলছেন, আড়াইহাজারের কেন্দ্রীয় এক নেতার নেপথ্য কারসাজিতে এসব অগঠনতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসাবে ঘোষণা করা হয় রূপগঞ্জের নাছির উদ্দিনের নাম। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ৫টি থানা ও ৫টি পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এরমধ্যে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন নিজেকে আহ্বায়ক করে জেলার অধীনে থাকা তারাব পৌরসভা কমিটি অনুমোদন করেছেন। যা নিয়ে চলছে চরম বিতর্ক। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর পৌরসভা কমিটির কাগজ তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে নিষেধ করেন। তবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গত ২১ জানুয়ারি ওই ১০টি ইউনিট কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি স্বীকার করেন। দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, এখানে ব্যক্তি উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়েছে এবং দলীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। কারণ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের এক নেতার এক পদ নীতি এখানে মানা হয়নি। বরং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি সব যুগ্ম-আহ্বায়ককে থানা ও পৌরসভা ইউনিট কমিটিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে দলের থানা ও পৌরসভা পর্যায়ের নেতাকর্মী ও তৃণমূলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। নেতারা জানান, যার নেপথ্য ইশারা ও নির্দেশে এসব করা হচ্ছে মূলত তিনি আড়াইহাজারের এক কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানবিরোধী হিসাবে পরিচিত। আড়াইহাজার থানা বিএনপির নতুন কমিটির শীর্ষ নেতারা এই কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারী।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয়নি। এতে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কারণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাত্র কয়েকদিন আগে বহিষ্কার হয়েছেন। এরপর যিনি ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হলেন তিনিও কারাগারে। এরপরে যিনি দায়িত্ব পেলেন (নাছির উদ্দিন) তিনি দুদিনের মাথায় গোপনে ১০টি ইউনিট কমিটির অনুমোদন দিয়ে দিলেন। আরও হাস্যকর বিষয় হলো জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়ে তিনি নিজেই রূপগঞ্জ তারাব পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হয়েছেন। রাজীব বলেন, কমিটি করার আগে আমাদের প্রতিটি থানায় টিম করা হয়েছিল; আমি কাঞ্চন পৌরসভার দায়িত্বে ছিলাম। সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে লিখিত তথ্য দেওয়ার কথা ছিল সেটা না নিয়েই তারা কমিটি দিয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা এখানে বাস্তবায়ন হয়নি। টিমের সুপারিশে কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। জেলা বিএনপির অপর সদস্য প্রবীণ নেতা নজরুল ইসলাম টিটু জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সারা দেশে দলকে পুনর্গঠন করতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেছেন। সে প্রক্রিয়া এখানে অনুসরণ করা হয়নি। তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিল সার্চ কমিটি ও মূল্যায়ন কমিটিতে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের মতামতের ভিত্তিতে ও সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটিগুলো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করতে হবে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন জানান, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় নির্দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি অনুমোদন করতে পেরেছি। এটা আমাদের সফলতা। আশা করছি, কমিটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তারাব পৌরসভা কমিটি নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে, তাই এটার কাগজ আমরা গণমাধ্যমে দেইনি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে সভা না করে বা জেলা আহ্বায়ক কমিটির সব সদস্য নিয়ে কোনো আলোচনা না করে কেন কমিটি দেওয়া হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেননি তিনি।