প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক উন্নত দেশ এখনো উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কার্যক্রমকে সমর্থন করা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে।
শুক্রবার প্যারিস পিস ফোরামে (পিপিএফ) ‘সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গ্লোবাল সাউথে অনেক নিজস্ব উন্নয়ন সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে সমাধানগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োগ ও জোরদার করা যেতে পারে। এ প্রয়াস প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে পুনরায় সমাধান উদ্ভাবন এড়াতে সাহায্য করতে পারে৷
তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোতে সরাসরি সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য আরও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের ধনী দেশগুলোর অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সাউথ-সাউথ সহযোগিতা কর্মসূচির স্বচ্ছতা এবং ব্যয়-সাশ্রয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
২০১৯ সালে একটি সাউথ-সাউথ জ্ঞান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি দক্ষিণে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান সৃষ্টির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ, জি২০ এবং ওইসিডিকে এ ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ধারণাটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডায় স্থান পেয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার উদ্যোগ জোরদার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সৃজনশীল উন্নয়ন সমাধানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তবুও, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার প্রয়াস আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় পেছনে আসন নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে প্রচলিত চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ত্রিমুখী সহযোগিতার ধারণাটি সম্ভাবনার অনুরূপ সফল হয়নি। এ ঘাটতি দূর করা দরকার।
বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে অসম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড ১৯ মহামারি চলাকালে আমরা দেখেছি যে, আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা গ্লোবাল সাউথের লাখ লাখ লোককে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার সুযোগ লাভের বিশাল ব্যবধানটি খুব বেশি উল্লেখ করার মতো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের ভ্যাকসিনের সমতা ও গুণমান নিশ্চিত করার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন শেয়ার করার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড় দেওয়াসহ সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশ জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ ও অন্যান্য সুবিধা কয়েকটি বন্ধু দেশে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ায় আমাদের অর্জন বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৌঁছে গেছে।