ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রসূতির অস্ত্রোপচার করলেন পশুচিকিৎসক, মা-নবজাতকের মৃত্যু

নেত্রকোনা প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৫ মে ২০২২ ০৫:৩৭:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

নেত্রকোনার বারহাট্টায় বাড়িতেই শরীফা আক্তার (১৯) নামে প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন এক পশুচিকিৎসক। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৪ মে) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।

 

প্রসূতি শরীফা একই গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী হাইছ উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত ওই পশু চিকিৎসক হলেন- একই উপজেলার জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেম। তিনি এলাকায় পশুচিকিৎসক হিসেবে পরিচিত।

 

 

স্থানীয়রা জানায়, কিছু দিন ধরে তিনি বিভিন্ন প্রাণীর পাশাপাশি মানুষের চিকিৎসাও করছেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছেন। তবে পরাজিত হন।

 

 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। গত বছর পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের মহসিন নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে স্বামীর বাড়ি থেকে চন্দ্রপুর বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

 

বুধবার ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ওই পশু চিকিৎসকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কয়েকজন ওই চিকিৎসককে বাড়ির পেছন দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।

 

 

এলাকাবাসী জানান, কাশেম প্রাণীদের চিকিৎসা করেন। মানুষের চিকিৎসা করা তার ঠিক হয়নি। তারপর পর্যাপ্ত ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ছাড়া রোগীর বাড়িতে এসে সিজার করলেন কীভাবে- তা বোধগম্য নয়।

 

ভুক্তভোগীর মা মাফিয়া আক্তার বলেন, ‘সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হলে কাশেম ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। তিনি রোগীকে দেখে বললেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে কোনও সমস্যা নেই। আমরা নেত্রকোনা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার কথায় ভরসা পেয়ে আর নেইনি। আমরা সাধারণ মানুষ, ডাক্তারের কথা মতোই সব করেছি। একপর্যায়ে তিনি সিজার করেন। পরে ওষুধ, স্যালাইন না থাকায় এগুলো আনতে একজনকে মোহনগঞ্জ পাঠানো হয়। তবে ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।’ 

 

শরীফার চাচা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ছাড়াই বাড়িতে শরীফার সিজার করে ফেলেন। পরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে একজনকে ওষুধ আনতে পাঠানো হয় মোহনগঞ্জে। অনেক দূরের পথ হওয়ায় ওষুধ নিয়ে আসতে আসতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। এদিকে টানাহেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলে সন্তানও মারা যায়।’

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য লালন বখত মজুমদার বলেন, ‘কাশেমের এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। না হলে আরও অনেকেই এভাবে ভুক্তভোগী হবেন।’

 

বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, ‘মানুষের চিকিৎসা বিশেষ করে সিজার করা তো তার একেবারেই উচিত হয়নি।’

 

অভিযুক্ত আবুল কাশেম সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে দাবি করেন, ‘সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ, ওষুধ ও সেলাইয়ের সরঞ্জাম আনতে দেরি হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।’ তবে শুধু পশু নয়, মানুষের চিকিৎসা করার সনদও তার আছে বলে দাবি করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে মানুষের চিকিৎসা করছেন বলেও জানান। 

 

মোহনগঞ্জ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহরিয়ার জাহান ওসমানি বলেন, ‘সিজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া কারও করার নিয়ম নেই।’

 

বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানায়নি। আপনার কাছেই এটি প্রথম শুনলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’