ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফরিদপুরে তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

নাজমুল হাসান নিরব,ফরিদপুর : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৪ জুন ২০২৩ ১০:১৫:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

ফরিদপুরে তীব্র গরমের সাথে  যুক্ত হয়েছে সীমাহীন লোডশেডিং। দিনে এবং রাতের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ না থাকায় নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে।

আজ শনিবার (০৩ জুন) সকালে ২৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ফরিদপুর আবহাওয়া অফিস। তবে দুপুর গড়ালে এ তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রিতে উঠে।

এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমের জন্য অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের না হলেও লোডশেডিংয়ে রক্ষা হচ্ছে না তাদের। আর জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে যাদের বের হতে হচ্ছে তাদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা পার করছে খেটে খাওয়া দিন মজুর, রিকশাচালক ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। রাতে লোডশেডিং হওয়ায় মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকেই নামাজ  আদায় করতে পারছে না। 

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় ফরিদপুরে  বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় এ লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনের ২৪ ঘন্টায় গড়ে ৬-৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ পান না তারা। কিছুক্ষণের জন্য এলেও আবার চলে যায়। মাত্রাতিরিক্ত গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। বিদ্যুৎ না থাকায় বাসা বাড়িতে দৈনন্দিন কার্য সম্পাদন করতে বেগ পেতে হচ্ছে। আর এ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফরিদপুরে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। এ তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন প্রবাহিত হতে পারে।  

এ আবহাওয়া কর্মকর্তা জানান, গতকাল শুক্রবার (০২ জুন) সকালে ফরিদপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; তবে একইদিন সন্ধ্যায় তা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে শনিবার (০৩ জুন) সকালে রেকর্ড করা হয় ২৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

সন্ধ্যায় যখন ফের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হবে তখন তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
 

ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (গ্রাহক সেবা) এস.এম রুবাইদ হোসেন বলেন, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু না হওয়ায় এ লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। তবে আগামী ২৫ জুন পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটি চালু হলে তখন এ লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমে আসবে।

রাত ১২ টার পরে বিদ্যুৎ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, পাওয়ার গ্রিড থেকে যখন যতটুকু আমাদের ঘাটতির কথা বলা হয়; তখন ততটুকু বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। সেটা রাত ১২ টা-১ টা কিংবা দিনেরাতের নির্দিষ্ট কোনো সময় বলে কথা নয়। ঘাটতি বলা হলেই বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে।  

এদিকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবন উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন,‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কিন্তু, তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে। এখন অবাক করার বিষয়, কয়লাই পাওয়া যাচ্ছে না।‘আমাদের কয়লা কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। আমি জানি, এই গরমে অনেকের কষ্ট হচ্ছে। আমরা তো লোডশেডিং একদম দূর করেছিলাম। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা যদি না হতো, আর করোনাভাইরাস যদি দেখা না দিতো, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা না দিতো, মূল্যস্ফীতি দেখা না দিতো; তাহলে কোনো কষ্ট হতো না। কিন্তু, আজকে আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যে জিনিস আমাদের বাইর থেকে আনতে হয়, সেটা কষ্ট করে আমাকে জোগাড় করতে হচ্ছে।’

এ সময় তিনি সুখবর দিয়ে বলেন, ‘যাহোক, তবুও সুখবর যে, কাতার এবং ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি দেশে সঙ্গে কথা হচ্ছে, যাতে আমরা গ্যাস আনতে পারি, এই কষ্ট দূর করতে পারি।’