টাঙ্গাইলের বাসাইলে চার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও সবকটি ইউনিয়নেই স্বতন্ত্রের আড়ালে রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী।
সারা দেশের ন্যায় পঞ্চম ধাপে বাসাইলের চারটি ইউপি নির্বাচনে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ধারণা করা হচ্ছিলো, এবারের ইউপি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সহজ হবে। তিনটিতে নতুনমুখ ও এক ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যানকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। দলের কঠোর অবস্থানের কারণে বিদ্রোহীদের নিয়েও তেমন কোনো শঙ্কা ছিল না।
মনোনীত প্রার্থীরাও মনে করছিলেন এমন কঠোরতার মধ্যে কেউ বিদ্রোহী হওয়ার সাহস দেখাবে না। ফলে মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে পারলেই নিশ্চিত জয়। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে পাল্টে গেছে হিসাব-নিকাশ। চার ইউপিতেই রয়েছে স্বতন্ত্রের আড়ালে বিএনপি প্রার্থীসহ বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
চারটি ইউপিতে সরেজমিন দেখা গেছে, চারদিকে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চারটি ইউপিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাপটের সঙ্গে মাঠ দাপাচ্ছেন। বেশিরভাগ ইউনিয়নে এখনও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি নৌকার মাঝিরা। ফলে দলের প্রার্থী, সমর্থক কর্মী ও নেতারা রয়েছেন চাপের মুখে।
ফুলকি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন তালুকদারের মনোনয়ন পরিবর্তন করে শেষ সময়ে মনোনয়ন দেয়া হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা করিম তালুকদারকে। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সামছুল আলম বিজু। প্রার্থীদের ব্যাপারে নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, স্থানীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে নৌকার মাঝির ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা কর্মীরা। তবে এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্রের আড়ালে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জাদিদুল ইসলাম বাবুলের সাথে সামছুল আলম বিজুর তুমুল লড়াই হতে পারে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।
কাউলজানী ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল গনি হাবিব। তবে এ ইউনিয়নে ভৌগলিক কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্রের আড়ালে বিএনপি নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকী।
হাবলা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম এবারো পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। স্বতন্ত্র প্রার্থী তরিকুল ইসলাম রতন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নিজামুল ইসলাম রুপনকে সমর্থন দেয়ায় ভোটের হিসাব পাল্টে গেছে-এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসীরা।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রাকিব খান শাহিন।
ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে এলাকায় অপরিচিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় নৌকার মাঝির ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন বেশির ভাগ ভোটারা। এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মামুন অর রশিদ, শামীম আল মামুন ও আব্দুস সামাদ ফারুকের মাঝে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসীরা।
দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রতিদিনই উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা গ্রামগঞ্জে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। প্রচারে পিছিয়ে নেই বিদ্রোহীরাও। পাশাপাশি চলছে সংরক্ষিত নারী ও সদস্য পদের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান গাউজ জানান, দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে শীর্ষ নেতারা মাঠে কাজ করছেন। আশা করছেন, নৌকার প্রার্থীরাই বিজয়ী হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভিন জানান, উপজেলার চারটি ইউপিতেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ ভোটাররা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
