আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চায় বিএনপি। রাজনৈতিক মাঠে দলটির সক্রিয় নেতাকর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে বলে মনে করছে আন্দোলনে থাকা এ দলটি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে নানা কৌশল নিয়েছে। বিপরীতে বিএনপিও পাল্টা কৌশল নিয়েছে। এছাড়া সহিংসতা এড়িয়ে আন্দোলনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছানো বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে বিএনপির সামনে বড় ধরনের এক অগ্নিপরীক্ষায়ই অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ধৈর্য্য ধরে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই এখন দলটির একমাত্র পথ।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে পুলিশ-এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যেই এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীদের তালিকা করা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এতে আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। নেতাকর্মীরা মাঠে থেকেই সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত বেগবান আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এই স্রোতের সামনে যেই দাঁড়াবে সেই স্রোতে ভেসে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘যা বলবো তা না লিখলে মামলা করব।’ পরে তিনি সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন।
দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য দলের চোখ এখন আন্দোলনের দিকে। পাশাপাশি দল পুনর্গঠনও দ্রুত শেষ করতে চায় তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামনে বিএনপিকে নানা ‘কৌশলে এগোতে হবে। সামনের দিনে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের পাশাপাশি নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
দলের নেতারা মনে করেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সব শ্রেণি- পেশার মানুষকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ করছেন।
এদিকে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১০ বিভাগে গণসমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ।
৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী। নয় বিভাগে গণসমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। এসব কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১০টি বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। রংপুর ও ফরিদপুর ছাড়া প্রতিটি টিমে স্থায়ী কমিটির সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় নেতাকে করা হয়েছে দলনেতা।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি, জেলা ও মহানগরের সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অথবা তাদের প্রতিনিধিকে করা হয়েছে কমিটির সদস্য। টিমে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে সমন্বয়কারী ও সহসাংগঠনিকদের সমন্বয় সহযোগী করা হয়েছে।
সবশেষ ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। এ টিমের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।
জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় টিমের সদস্যরা বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচি সফলে একাধিক প্রস্তুতি সভা করবেন। এসব সভায় মহানগর ছাড়াও বিভাগের সব জেলা, উপজেলা নেতাদের ডাকা হবে। কোথাও কোনো বিরোধ থাকলে তা সংশ্লিষ্ট টিমকে সমাধান করতে বলা হয়েছে। বিভাগীয় টিম ব্যর্থ হলে তা হাইকমান্ডকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে করণীয় কী হবে তা নিয়েও এসব বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে এবার প্রতিহত করার প্রস্তুতি থাকবে বলে জানান দলের নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মতে, ক্ষমতাসীন দলসহ অনেকেই বলে থাকেন সাংগঠনিকভাবে বিএনপির কোনো শক্তি নেই। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলটি সাংগঠনিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষও বিএনপির আন্দোলনে রাজপথে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। সেই সমালোচনার জবাব এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেওয়া হবে। বিগত কয়েক বছরে বিএনপি দল গোছাতে কাজ করেছে। পুনর্গঠনের মাধ্যমে দল এখন অনেকটাই ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতিই প্রমাণ করবে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কতটা মজবুত অবস্থানে আছে।
দলটির অভিযোগ, গত দেড় মাসেই বিএনপির অর্ধশতাধিক সমাবেশে হামলা করা হয়েছে। তারা বলেন, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মী নিহত হচ্ছেন। তবে মামলা হামলা মোকাবিলা করেই দলটি তাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিতে চায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি আসলে কতটা পেরে উঠবে তা নির্ভর করছে তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও শক্তি সামর্থের ওপর। আগামি দিনগুলোতে তাদের অকেগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
এদিকে জানা গেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি পুলিশের নানা বিভাগ থকে নেতাকর্মীদের তালিকা করারও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি গণমাধ্যমের বরাতে শুনের্ছি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে।