যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন-অর-রশিদকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ৮ নভেম্বর জেলা বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ওরফে ছোটলু এবং জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহকে বহিষ্কার করা হয়। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর ভিজিডির চাল ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে শার্শা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রিপনসহ তিনজনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। শুধু বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহ বা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাকিবুল ইসলাম রিপন নন, চার মাসে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন। দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান নিলেও ‘দুষ্টুদের’ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে হাইকমান্ড।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষা ও জনগণের আস্থা ধরে রাখতে বিতর্কিতদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করছে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
জেলা বিএনপির সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, দলের কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’ জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলের কেউ শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে ছাড় নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বহিষ্কার, পদ স্থগিত করছি। জেলা পর্যায়ের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে শাস্তির জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হচ্ছে।’
জানা যায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পলায়নের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিএনপির হাউকমান্ড নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বার্তা দেয়। এরপরও একশ্রেণির নেতাকর্মী বেপরোয়া আচরণ শুরু করেন। অনেকের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, দখল, হামলা ও মামলা বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠছে। চার মাসে যশোরে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্তও নিয়েছে।
সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর ভিজিডির চাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শার্শা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রিপনসহ তিন নেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ইসকেন্দার আলী জনি এবং কেশবপুর উপজেলা বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ভান্ডারখোলা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়।
৮ নভেম্বর জেলা বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ওরফে ছোটলু এবং জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ৯ নভেম্বর ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মী পিয়াল হাসান খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজাকে বহিষ্কার করা হয়।
২ নভেম্বর দুই গ্রুপে সংঘর্ষের জেরে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মিনু, যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান, সদস্য রজব আলী, তবিবর রহমান তবি ও তরিকুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
৮ আগস্ট দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপির ৩৫ নেতাকর্মীকে শোকজ করা হয়। একই দিন হামলা, ভাঙচুর, হুমকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৩ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও মনিরামপুর উপজেলার একজন ও কেশবপুর উপজেলার দুই বিএনপি নেতা ও যুবদলের তিন নেতা রয়েছেন বহিষ্কৃতের তালিকায়।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ