ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে শখের মৃৎশিল্প, ভাল নেই শিল্পীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৪০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

মাটির তৈরি তৈজসপত্র বাংলা ও বাঙালির প্রাচীনতম একটি ঐতিহ্য। যার রয়েছে সোনালি অতীত। কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎশিল্প। আবহমানকাল থেকেই বাংলা ও বাঙালি নামের সঙ্গে মিশে আছে মাটির গন্ধ।

এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কুমার বলা হয়। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো মাটির জিনিসপত্র। তবে এখন প্লাস্টিকের পণ্য বের হওয়ায় কদর নেই এই পরিবেশবান্ধব শিল্পটির। যোগানের তুলনায় চাহিদা না থাকায় ভাল নেই কুমাররা। 

অনেকেই এই পেশা ছেড়ে বেঁচে নিয়েছে অন্য পেশা। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য

কুমার শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। যা ছাড়া জনজীবন ছিল অসম্পূর্ণ, আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। মাটির তৈরি কলসি, মটকি, হাঁড়ি-পাতিল, ফুলের টব, সরা, বাসন, সাজের হাঁড়ি, মাটির ব্যাংক, শিশুদের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী নানা ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করত কুমারেরা। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি।

জেলার অনেক এলাকায় এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ লোকজনের বসবাস রয়েছে। মৃৎশিল্পিরা নিপুণ হাতে সামান্য মাটিকে বিভিন্ন নান্দনিক পণ্যে রূপ দেন। বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের

শিবনগর পালপাড়া ও উথাড়িয়াপাড়ায় গেলে দেখা মিকে মৃৎশিল্পীদের। এখানের এখনো প্রায় ৫০ টি পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত। 

কথা হয় শিবনগর পাল পাড়ার মিন্টু চন্দ্র পালের সাথে। তিনি জানান, জন্মের পর থেকেই সুনামের সাথে এই কাজ করে যাচ্ছেন এবং তাদের পূর্ব পুরুষরা একই  কর্মজীবনে ছিল। এই কাজ করে ভালভাবে সংসার চালানো যায় না। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করানো যায় না। পরিবারে কোন ধরনের উন্নতি হয়নি। সরকারের সহযোগিতা না পেলে হাজার বছরের পূর্ব পুরুষের স্মৃতিগুলা ধরে রাখা অসম্ভব বলে জানান তিনি।

আরথী রানী পাল বলেন, একটা ভাল শাড়ি পরতে পারি না। ভাল কিছু খেতে পারি না। খুব কষ্টে কাটে আমাদের জীবন। এত কষ্ট করে হাত দিয়ে জিনিস বানিয়ে একটা ৮/১০ টাকা বিক্রি করি। তাও বিক্রি হয় না। প্লাস্টিকের জিনিস বের হয়ে এর চাহিদা কমে গেছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমরা এ কাজটা চালিয়ে যেতে পারব।

আধুনিকতার স্পর্শে এই শিল্পের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। বলতে গেলে বিলুপ্তির পথে প্রায় এই শিল্প। কুমার সম্প্রদায়ের অনেক নারী-পুরুষ বর্ণনা দেয় তাদের অসহায়ত্বের কথা।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে