ঢাকা, সোমবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২১শে মাঘ ১৪৩১

বিশ্বায়নের যুগে বদলে যাচ্ছে পরিবার থেকে রাষ্ট্রনীতি

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:৪১:০০ অপরাহ্ন | মতামত

পরিবার সমাজ সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষ সবকিছু নিয়েই কাজ করছে। বদলে যাচ্ছে পরিবার থেকে রাষ্ট্রনীতি। বিশ্বায়নের যুগে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মহাবিশ্বে প্রবেশ করেছে মানব সভ্যতা। সবকিছুর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পেরিয়ে এখন উন্নয়নের মূলনীতিতে বিশ্বাসী গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের কোন দেশও পিছিয়ে নেই এই অগ্রযাত্রায়। যে যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মতে বদলে যাচ্ছে পরিবার। পরিবারের সংজ্ঞা। 

পরিবার বলতে সাধারণত পিতা মাতা ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠা একটি সংসার বা সমাজ ব্যবস্থা। একসঙ্গে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একটি প্রসারিত জীবন ব্যবস্থা। পরিবার হলো একটি বৃহৎ সংসার, যেখানে অন্যান্য আত্মীয় ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসবাস করা। বর্তমানে বদলে যাচ্ছে পারিবারিক অবস্থান। বদলে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় নীতি। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে রাষ্টবিজ্ঞান একটি সমাজ রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ও পরিচালনার বিজ্ঞান। যা রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার, নীতিমালা, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইন ও বিচারপতির ক্ষেত্রে গবেষণা ও বিশ্লেষণে মূলত ব্যবহার হয়ে আসছে।

রাজনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিছু নিয়ম নীতি বা মূলনীতির প্রয়োজন হয়। যেখানে মৌলিক অধিকারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানবিক মর্যাদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সাম্য ও সামাজিক সুবিচার নিয়ে নীতি নির্ধারণ তৈরী করা হয়। গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আমরা সংবিধান, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করবো।

সংবিধান হল কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা বা সংগঠনের সেই সকল মৌলিক বিধানাবলী যা ওই রাষ্ট্রব্যবস্থা বা সংগঠনটির পরিচালন নীতি ও আইনি ভিত্তি গঠন করে।

সাম্য বলতে বোঝায়, প্রথমত: কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণির জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অবসান করা। দ্বিতীয়ত: সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত: যোগ্যতা অনুযায়ী সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা। ভোগ করার ব্যবস্থা করা। সামাজিক সুবিচার, সমাজের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রীয় নীতি। 

একটি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য।

বহুত্ববাদ রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সুন্দর নীতি। এর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয় উঠে আসে। মূলত রাজনৈতিক দর্শন হিসাবে বহুত্ববাদ হল একটি রাজনৈতিক সংস্থার মধ্যে বৈচিত্র্য, যা বিভিন্ন স্বার্থ, বিশ্বাস ও জীবনধারার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নির্দেশ করে। 

আর গণতন্ত্র হলো একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের সকল প্রকার মত প্রকাশ ও অধিকার আদায়ের নিয়ম নীতি।

সাধারণত গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে একটি রাষ্ট্রের আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে। যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। গণতন্ত্র শব্দটি  সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও এটি অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়ে থাকে। 

যে কোন দেশের বদলে যাওয়া পরিবার থেকে রাষ্ট্রনীতি সাধারণ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে এমনটি প্রত্যাশা করি আমরা।

লেখক: অধ্যাপক আবু সালে মো. ফাত্তাহ

কবি লেখক সাংবাদিক ও গবেষক