চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে ১৫ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়েছে উত্তাপ। প্রচার যুদ্ধে শুরু হয়েছে তুমুল বাকযুদ্ধ আর পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। এলাকার মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি লক্ষ করা গেছে। আর এসব করে চলেছেন প্রধান দল ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কিছুটা অস্ব^স্তিতে রয়েছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা। এদিকে ভোটাররা এসব ভালো চোখে দেখছে না। তাদের দাবী, মানুষ নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা জানতে চায়, কোন দ্বিধাদ্বন্ধ নহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই একটি ছাড়া সবগুলোতে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়া বিদ্রোহীদের মুখোমুখি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এতে করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম বিরোধ ও ক্ষোভ। প্রার্থীদের মাঝে নৌকা প্রতীক বরাদ্ধের পরও দলের বিদ্রোহী এবং পদে থাকা নেতাকর্মীরা নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন সবগুলো ইউনিয়নে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও উঠোন বৈঠক, মোটরসাইকেল মহড়াসহ গ্রামীন বাজারগুলোতে সভা সমাবেশ ও শোডাউনের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি সমর্থন যাছাইয়ে নেমে পড়েছেন।
দলীয় মনোনয়ন বাহিরে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহীদের নিয়ে মোটেও ভীত নয় বলে মন্তব্য করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তাঁরা বলছেন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাহিরে দলের বিরুদ্ধে ভোটে অংশগ্রহণ করলে আজীবন বহিস্কারসহ দলের পদ পদবি বঞ্চিত হবেন। তবে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মতে এবারও স্থানীয় নির্বাচন গুলোতে অংশগ্রহণ করছি না বলে জানান, বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এ নির্বাচনে সবকটিতে ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক বিদ্রোহীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিতে সরকার দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি বিদ্রোহীরা রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। এর আগে ৭ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে ওঠেছে। এখানে বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে ৮৯ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছে। ১৫টি ইউনিয়নে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯’শ ৯১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদের মধ্যে নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে ভবানীগঞ্জ, হাজিরপাড়া ও উত্তরজয়পুর এই ৩টিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র আরও জানায়, বেশির ভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) পেয়েও স্বস্তিতে নেই চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তাদের দুচিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে মাঠে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত এসব বিদ্রোহী প্রার্থী সরকার দলীয় প্রার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তৃণমুলে এসব প্রার্থীদের ব্যাপক জনসমর্থন থাকায় মাঠ ছাড়তে নারাজ তারা। আর তাতে নৌকার প্রার্থীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়বেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেও তাদের সমঝোতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। এসব এলাকার নির্বাচনী মাঠ ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বিদ্রোহী এসব প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
এদিকে গত বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় প্যাডে বিদ্রোহী ২৭ প্রার্থীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু সাংগঠনিক এই ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা সবাই নিজেদের বলয়ের লোকজন নিয়ে গণসংযোগসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েকজন আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী জানান, সরকারের উন্নয়ন অব্যহত রাখতে দল তাদের নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছেন। নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করা মানে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। তাই দল এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে অবাধ-সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে জানান, পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
বিদ্রোহীদের বহিস্কার আদেশে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না এমন মন্তব্য করে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। এখানে অতীতে অনেক নেতা দল থেকে বেরিয়ে গেছেন, কিন্তু দলের কোনো ক্ষতি হয়নি। দলের যারা বিদ্রহী হয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতার সাথে যোগাযোগ করেই তাদেরকে বহিস্কার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর। এর মধ্যে তিনটিতে হবে ইভিএম পদ্ধত্বিতে এবং বাকীগুলোতে হবে ব্যালেটে।