ঢাকা, বুধবার ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ই মাঘ ১৪৩১

ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক, শিক্ষা অধিদপ্তরের বেহাল অবস্থা?

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : বুধবার ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:৩৭:০০ অপরাহ্ন | মতামত

শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকায় বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা বিভাগে। কিছুটা হলেও থমকে গেছে সারাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাজ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। গত ৩ জানুয়ারি থেকে শিক্ষা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কোনোমতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে দপ্তরকাজগুলো। শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ সপ্তাহেই এই পদে নিয়োগ হতে পারে। 

তবে মজার বিষয় হল এই অধিদপ্তরের অর্থ শাখার পরিচালক ও মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালকের পদ, কলেজ ও প্রশাসন দপ্তরের পরিচালক পদ এখনো ফাঁকা রয়েছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনা অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তর সারাদেশের মাধ্যমিক ও উচচতর শিক্ষা শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে।

শিক্ষা বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, এই অধিদপ্তর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার ৫৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা করেন কর্মকর্তাগণ। যেখানে  প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার ৫২৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন। আর শিক্ষাঙ্গনে রয়েছেন এক কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থী। 

শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ শূন্য থাকায় বাজেট বাস্তবায়নসহ নানা কাজ বাধাগ্রস্ত হচেছ। মাধ্যমিক ও উচচমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, ভর্তি প্রক্রিয়াসহ পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদনসহ বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের জটিলতা। অবসরে যাওয়া সরকারি শিক্ষক অধ্যাপকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ফাইলের অনুমোদন না হাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী করছে এই নিয়ে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কর্মকর্তা, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, বিভিন্ন বড় বড় কলেজের অধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়নে নাকি লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। সরিষার ভিতর ভূত, পুরনো সে কথাটি এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে চেপে আছে। তাহলে কি পরিবর্তন হল। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কয়েকজন যুগপূর্তি করছে এই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। বিশেষ সহকারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ লেনদেন করায় ক্ষুব্ধ অনেক ভুক্তভোগ সিনিয়র অধ্যাপক ও সদ্য ওএসডি হওয়া বোর্ড চেয়ারম্যান, বোর্ডের সচিব, কলেজ পরিদর্শক, আঞ্চলিক কর্মকর্তা, অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকগণ।

জানা গেছে, সারাদেশে শতকরা ৬০ ভাগ স্কুল কলেজ মাদ্রাসা চলছে অ্যাডহক কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত পদের শিক্ষক দিয়ে। এটি দীর্ঘায়িত হলে মানসম্পন্ন শিক্ষা বাধাগ্রস্থ হবে। উন্নত শিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অধ্যক্ষ সুপারগণ অ্যাডহক কমিটির কারণে ৫ ই আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনিক কাজে বা আর্থিক লেনদেনে ও নিয়োগে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টেও সচিব, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব পলাতক রয়েছে। তাদের এই পথ গুলোতে কাউকে পদায়ন করা হয়নি। এই দুই দপ্তরের সচিব পদ শূন্য থাকার ফলে সারাদেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের অবসরের পর আর্থিক সুবিধা দেয়ার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন অবসরে যাওয়া প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর পরিবার। 

সারাদেশের সরকারি বেসরকারি লাখ লাখ শিক্ষক এই বেহাল দশা থেকে মুক্তি চায়। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

লেখক: আবু সালে মো. ফাত্তাহ

কবি, লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক