ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে গেল বছরের তুলনায় এবার ভুট্টার দাম দ্বিগুন। গত বছর ৮৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ভুট্টা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৯৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে সেই ভুট্টার বস্তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯৫০ টাকা থেকে দুই হাজার১৫০ টাকা দরে।
ভুট্টার ভালো ফলন এবং দাম দুটোই ভালো পাওয়ায় কয়েক দফা শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি ও গেল আলু মৌসুমের লোকসান মিটিয়ে ঘুরে দাড়াচ্ছে কৃষকরা।
কৃষকরা জানিয়েছে চলতি বছর আগাম জাতের ভুট্টায় বিঘা প্রতি ৪০ হাজার এবং শেষ মৌসুমের ভুট্টায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার লাভ হচ্ছে। যা গত বারের ফলন ও দামের তুলনায় দ্বিগুন। এর ফলে আলুতে হওয়া লোকসান ভুট্টাখেত থেকে উঠানো সম্ভব হয়েছে। হাসি ফিরেছে অনেক কৃষকের মুখে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ৮ ইউনিয়নে চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার দুইশত হেক্টর বেশি। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের কয়েক দফা শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর ভুট্টার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির সম্মুখিন হলেও খেতে থাকা অবশিষ্ট ভুট্টাতেও বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা লাভ থাকবে কৃষকদের।
আলু তুলে চার বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছিলেন উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক সামশুল আলম। তিনি জানান, চার বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। দুবিঘা জমির ভুট্টা ১ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। আরও দুবিঘা জমির ভুট্টা রয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হলেও ৮০ হাজার টাকা দাম পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
কৃষকরা জানায়, আলু তোলার পর ওই জমিতে ভুট্টাখেতের আবাদ করলে প্রতি বিঘায় খরচ হবে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর ধান কাটার পর আগাম জাতের ভুট্টা চাষাবাদ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ৬০ মণ ভুট্টা এবং ফলন আশানুরুপ না হলেও কমপক্ষে ২৫ মণ ভুট্টার ফলন হচ্ছে। লোকসানের ঝুকি না থাকায় দিন দিন ভুট্টা চাষাবাদের চাহিদা বাড়ছে।
উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর গ্রামের ভুট্টাচাষী আব্দুল করিম জানান, ৩ বিঘা জমিতে আলুতে লোকসান গুনেছি ৪৫ হাজার টাকা। ওই জমিতে আলু তোলার পর ভুট্টা লাগিয়েছিলাম। ভুট্টা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়েছে। আলুর দেনা পাওনা মিটিয়ে স্বস্তিতে আছেন তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র জানান, ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধির জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২ হাজার চাষীকে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ প্রদান করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের লোকজন কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছে। বাজার দর ভালো থাকায় দাম পাচ্ছে কৃষক। সব মিলিয়ে আলু লোকসান কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে কৃষকরা।