ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

ভোটের মাঠে প্রধান সম্বল তিন মেয়ে

কিশোর কুমার দত্ত, লক্ষ্মীপুর সদর : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চতুর্থধাপে ইউপি নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরে ১৫টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহন আগামী ২৬ ডিসেম্বর। নির্বচনী মাঠে প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আবু সালেহ মো. ইউছুফ নামের এক সদস্য (মেম্বার) প্রর্থীর ভিন্নধর্মী প্রচার-প্রচারণা দেখা গেছে। যেখানে অন্য প্রার্থীরা পুরো নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার-পেস্টুন-প্লেকার্ড ছড়িয়ে দিচ্ছেন। টাকার অভাবে সেখানে ইউছুফ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। কোথাও তার কোন পোস্টার-পেস্টুন নেই। ভোটাররা চাইলেও তা দিতে পারেন না। ভোটের মাঠে প্রচারণায় তার প্রধান সম্বল তিন মেয়ে। তার সাউন্ডবক্সে তার পক্ষে বাজানো গান। এছাড়া দৃশ্যমাণ আর কোন প্রচারণার মাধ্যম নেই। তিনি একই ওয়ার্ডের শরীফপুর গ্রামের মাওলানা আবুল বারাকাত সাহেবের বাড়ির বাসিন্দা।  

 

এদিকে নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী ভোট করার বৈধতা ও প্রতিক পেলেও ইউছুফ টাকা শুন্য। তার কোন কর্মীও নেই। তবে কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া তিন মেয়েই তার বিশ্বস্থ কর্মী। তিন মেয়েসহ একটি হ্যান্ড সাউন্ডবক্স নিয়ে তিনি মানুষের দরজায় গিয়ে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হলে প্রতি ৬ মাস পর পর একই দরজায় দেখা যাবে বলে ভোটারদের কাছে ওয়াদা করছেন। ভোটারদের কাছে তিনি সৎ ও কোমল হৃদয়ের মানুষ হিসেবেও পরিচিত। 

 

অন্যদিকে বাবার পেছন পেছন সাউন্ডবক্স হাতে ফুটবল প্রতিকের প্রচারণায় তিন মেয়ে উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। বাবার সঙ্গে নুসরাত জাহান অন্তরা, ইফরাত জাহান স্মৃতি ও সানজিদা জাহান শোভা ভোটারদের কাছে ফুটবল্র প্রতিকে ভোট চাইছেন। বাবাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করতে ছোট-বড় সকলের দোয়ার দরখাস্ত করে আসছেন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে।

 

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা আবু সালেহ মো. ইউছুফ। একসময় গার্মেন্টসে অফিসিয়াল চাকরি করলেও এখন তিনি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশানি করিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। বাড়তি কোন উপার্জনও নেই তার। তবে তিনি মানুষের সেবা করার স্বপ্নে বিভোর। সেই লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ১ বছরের অগ্রিম টিউশান ফি নিয়েই ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। এতে টাকা নয়, তার সবচেয়ে বড় পুঁজি জনগণ। ফুটবল প্রতিক নিয়ে গণসংযোগকালে ইউছুফ নিজেই এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

জানা গেছে, এইচএসএসি সনদ দারী ইউছুফ ঢাকার একটি গার্মেন্টসে অফিসিয়াল পদে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে গার্মেন্টসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাড়িতে চলে আসেন। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারের ঘানি টানতে ছোটখাটো একটি ব্যবসাও করেন। সেখানেও ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। অবশেষে বাড়ির আশপাশে শিক্ষার্থীদেরকে টিউশানি করে সংসার চালাচ্ছেন। শধু সংসারই নয় তিন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতও করছেন। তার বড় মেয়ে অন্তরা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী ও মেঝো মেয়ে লক্ষ্মীপুর মাহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সংসারের হাল ধরতে ও পড়ালেখার খরচ চালাতে অন্তরাও এলাকায় টিউশানি করেন।

 

কয়েকজন ভোটার জানান, ইউছুফ খুব ভালো মানুষ। সবার সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। কখনো কারো ক্ষতি করেননি। সংসারে অভাব থাকলেও এলাকার বিপদগ্রস্থদের পাশে ছিলেন। আর্থিক সহযোগীতা সম্ভব হয়নি হয়তো, তবে শ্রম দিয়ে মানুষের উপকার করতে তিনি ভুলেন না। তার মতো একজন মেম্বার পেলে এলাকার মানুষেরই উপকার হবে। ইউছুফকে মেম্বার নির্বাচিত করে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

 

ইউছুফের মেয়ে অন্তরা ও স্মৃতি বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, আমার বাবা সততার সঙ্গে জীবনযাপন করে আসছেন। সব সময় নিজের সাধ্যমতো মানুষের উপকারে এগিয়ে এসেছেন। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। জনপ্রতিনিধি হওয়া বাবার স্বপ্ন। আশা করি ভোটাররা তার স্বপ্ন পূরণে ফুটবল প্রতিকে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবে।

 

ইউছুফের স্ত্রী পারুল আক্তার বলেন, তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। ইউছুফ নিজেও দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে তার সুস্থতায়। অভাব থাকলেও এলাকার মানুষের উপকারে তিনি ছুটে যান। টাকা দিয়ে না পারলে শ্রম দিয়ে তিনি মানুষের উপকার করে আসছেন। সবাই তাকে ভোট দিয়ে স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি তাকে এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিন।

 

এ ব্যাপারে আবু সালেহ মো. ইউছুফ বলেন, আমার কাছে টাকা নেই। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে একবছরের অগ্রিম টিউশানি ফি নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছি। টাকা না থাকায় আমার কোন কর্মী নেই। তিন মেয়েকে নিয়েই আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। মানুষের কাছে ভোট চাচ্ছি। টাকা সব নয়। আমার মূল পুঁজি জনগণ। তারা আমাকে ভোট দিলে আমি এলাকার উন্নয়ন করতে পারবো। আমি নির্বাচিত হলে ভোটারদের দরজায় গিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করবো। অতীতে কি করেছি সব ভুলে ভবিষ্যতটা জনগণের সেবা করে কাটাতে চাই। আশা করি, ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে সেই সুযোগ করে দিবেন।

 

প্রসঙ্গত, চতুর্থধাপের ইউপি নির্বাচনে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদসহ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ইউনিয়নের ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটাররা তাদের ভোটার প্রয়োগ করবেন। ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইউসুফের সঙ্গে বর্তমান ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান (মোরগ) ও নাজমুল হাসান পলাশ (তালা) প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করছেন।