রাজশাহীর দুর্গাপুরে পরকিয়ার জেরে গলা কেটে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই জননের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালত-২ রাজশাহীর বিচারক আকবর আলী শেখ এই রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মফিজ উদ্দিন (৪৫) ও ফুলজান বিবি (৪০) । এই মামলার অপর আসামি ফুলজান বিবির স্বামী দেরাজ মিস্ত্রি এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছে আদালত। এই মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে আদালত।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন, দেরাজ মিস্ত্রির স্ত্রী ফুলজানের সাথে পরিকিয়া ছিল মফিজ উদ্দিনের। একদিন সেই বাড়িতে নূরনবীকে দেখতে পান মফিজ উদ্দিন। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নুরুন্নবীকে হত্যার হুমকি দেন মফিজ।
এই সূত্র ধরে পরিকল্পিত করে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নুরুন্নবীকে বাড়িতে ডাকেন ফুলজান। আর আগে থেকেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মফিজ উদ্দিন। এর পরে নুরুন্নবী ও মফিজের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ফুলজান বিবি একটি ধারালো হাসুয়া মফিজের হাতে তুলে দিয়ে হত্যা করাতে বলে। এতে মফিজ নুরুন্নবীর গলায় আঘাত করলে মস্তক আলাদা হয়ে চামড়ায় ঝুলে যায়।
এর পরে তারা মফিজ ও ফুলজান বিবি নিহত নুরুন্নবীর মরদেহটি একটি বস্তার ভতরে ভোরে দূরের জমিতে ফেলে আসেন। আর মস্কটি আরো দূরে ফেলে দিয়ে আসে। মফিজ ও ফুলজান বিবির ধারনা ছিল-মানুষ যেনো মনে করে নুরুন্নবীকে গলা কাটারা হত্যা করে মস্ক নিয়ে গেছে। তবে যে রাস্তা দিয়ে হত্যার পরে মৃত নুরুন্নবীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে রক্ত পড়ে ছিল। এই রক্ত ফুলজান বিবির বাড়ি থেকে মরদেহ ফেলে আসা জমি পর্যন্ত দেখা যায়।
এই ঘটনায় স্থানীয়রা ফুলজান বিবির বাড়ি ঘেরাও করে। পরে পুলিশ ফুলজান বিবি, তার স্বামী দেরাজ মিস্ত্রি, ছেলে আব্দুর রহিম ও মফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তিতে মামলাটি সিআইডিতে গেলে ছেলে আব্দুর রহিমের কোন সংশ্লিস্টতা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়। পরবর্তিতে আদালতে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর দুর্গাপুরের কাঠালবাড়িয়া নিজ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন নুরুন্নবী। একদিন পরে সকালে দুর্গাপুরের কান্দরে বিলে জেহের মন্ডলের ভিটায় নুরুন্নবীর মস্তিষ্ক বিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । এঘটনায় নুরুন্নবী ছেলে হাসেম আলী দূর্গাপুর থানায় বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করলে মামলা দায়ের করেন।