ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরের সুপারি সুখ্যাতি ছড়াচ্ছে দেশ ও প্রবাসেও

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর। | প্রকাশের সময় : শনিবার ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

 
  উপকূলীয় জনপদ লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদন হয়। এখানকার সুপারি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয় জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
 
সোমবার লক্ষ্মীপুরের সুপারি বড় বাজার দালাল বাজার,  হায়দারগঞ্জ,  রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর উত্তর তেহমুনী সব চেয়ে বড় বাজার বসে। বর্তমান সময়ে সুপারি ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে বস্তা ভরে প্রক্রিয়াজাত করছেন। চাষীরা দরকষাকষি
করে ব্যবসায়ীদের কাছে সুপারি বিক্রি করছেন। 
 
সুপারি প্রতি পণ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২৫ টাকায়। প্রতিটি কাহন(১৬ পণ) সুপারি এখন বিক্রি হচ্ছে ২২শ থেকে ২৪ শ ৫০ টাকায়। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা হায়দারগঞ্জ -মোল্লার হাট-রাখালিয়া বাজার- সদর উপজেলা পোদ্দার বাজার- বশিক পুর পাটওয়ারি হাট -  সোনাপুর সমবায় বাজার-জকসিন-চন্দ্রগ্জ ও ভবানীগঞ্জ -রামগঞ্জ উপজেলার মিরগঞ্জ রামগঞ্জ বাজারসহ কমলনগর ও রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার -চরফলকন,তোরাবগঞ্জ বাজার ও রামগতি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সুপারি ক্রয়- বিক্রি হয় জমজমাট।
 
গত বছর সুপারিতে ৯৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ হাজার ৫০০কাহন সুপারি ক্রয় করেন দালাল বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন।একই বছর জেলার বিভিন্ন স্থানে সুপারি ক্রয় - বিক্রি করে তিনি লাভ করেন ১৯ লাখ  টাকার উপরে।
তিনি বলেন লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির ব্যপক চাহিদা এ জেলা সুপারির উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। 
 
সুপারির ওপর অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে সাত হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। বর্তমান বাজারমূল্যে এবার সুপারি থেকে হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। গেল বছর প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা আয় করেছে লক্ষ্মীপুরের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
 
২০১০-১১ অর্থবছরে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার ৮৬২ টন সুপারি উৎপাদন হয়। সে তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে সাত হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৭ হাজার টন সুপারি উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে। পাঁচ বছরে এখানকার উৎপাদিত সুপারি থেকে ৩০০ কোটি টাকা আয় হলেও চলতি বছর দ্বিগুণ আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
এক মাস ধরে বাগান থেকে জেলার বাজারগুলোতে পাকা সুপারি কৃষকরা আনতে শুরু করেছেন। এ অঞ্চলের সুপারি সাইজে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় জেলার বাইরে সুপারির চাহিদা বেশি। এখন জমজমাট বেচা-কেনা চলছে লক্ষ্মীপুরের বাজারগুলোতে।
 
৫ ও ৭ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরের সুপারির বড় বাজার দালাল বাজার ও লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী সুপারিবাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বেপারিরা সুপারি কিনে বস্তা ভরছেন। চাষীরাও দরকষাকষি করে সুপারি বিক্রি করছেন। প্রতি পণ (৮০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। মান ভালো হলে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। প্রতি কাহন (১৬ পণ) সুপারি এখানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২৪০ টাকায়।
 
গত বছর সুপারিতে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ছয় হাজার কাহন সুপারি ক্রয় করেন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাসিন্দা সুপারি বেপারি আলমগীর হোসেন। ঐই বছর জেলার বাইরে সুপারি সরবরাহ করে তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা লাভ করেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সুপারির ব্যাপক চাহিদা। তবে এবার চাহিদার তুলনায় সুপারির উৎপাদন বেশি, তাই দাম একটু কম। তবুও লাভের আশায় সুপারি কেনা-বেচা করছেন তিনি।
 
 তবে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর সুপারির আকার অনেকটা ছোট। বেশি দামে কিনলেও পরে বিক্রি করতে গেলে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যবসাহীরা।
 
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর মার্কেটিং অফিসার মনির হোসেনের তথ্যমতে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় এবার সাত হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয় ১৭ হাজার টন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। সে হারে গত ১০ বছরের তুলনায় চলতি বছর ৪ হাজার ১৩৮ টন উৎপাদন বেড়েছে।