শরীয়তপুরের জাজিরায় মুরগী নিয়ে তুচ্ছ ঘটনার জেরে নজরুল মাদবর (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন তার পিতা লতিফ মাদবর (৭৫) এবং ছোট ভাই সুমন মাদবর (৩৫)।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নজরুল মাদবর মারা যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আল-আমিন।
এর আগে, গতকাল শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে জাজিরা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম আড়াচন্ডি গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহত সুমন মাদবর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তার পিতা লতিফ মাদবর জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নজরুল মাদবরের বাড়ির মুরগীর বাচ্চা প্রতিবেশী বোরহান মাদবরের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় বোরহান মাদবরের সাথে স্থানীয় আবু সালাম মাদবর, জলিল মাদবর, রাজন মাদবর ও মনু মাদবর ধারালো অস্ত্র নিয়ে নজরুল মাদবরের উপর হামলা চালায়, এসময় তার পিতা লতিফ মাদবর ও ভাই সুমন ছাড়াতে গেলে নজরুলসহ তার পিতা ও ভাই গুরুতর আহত হন।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশী হক মাদবরের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ নিহতের পরিবারের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে হক মাদবরের ছেলেরা বোরহান মাদবরের সাথে মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের কুপিয়ে জখম করে।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নজরুল মাদবর ও সুমন মাদবরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের দুই ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয় এবং তাদের পিতা লতিফ মাদবরকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়। শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত নজরুল মাদবরের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, আমাদের বাড়ীর বাচ্চা মুরগী বোরহান মাদবরের বাড়ীতে গেলে বোরহান মাদবর আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে তারা কয়কজনে মিলে গালিগালাজ শুরু করে। তার প্রতিবাদ করার কারনে আমার স্বামীর উপর তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে। তখন আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে গেলে ওরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর আমার দেবর ও শশুর আমার স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাদেরকেও এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমি তাঁদের ফাঁসি চাই।
নিহতের মেঝোভাই জসিম মাদবর বলেন, আমি আমার অটোভ্যান নিয়ে কাজে যাওয়ার সময় শুনতে পাই। বোরহান মাদবরের সাথে আমার বড়ভাই নজরুল মাদবরের সাথে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। একপর্যায়ে আমাদের সাথে দীর্ঘদিন জমি সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিপক্ষ হক মাদবরের ছেলের এসে বোরহান মাদবরের সাথে মিলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। এসময় আমার ছোটভাই ও বাবা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের সঠিক বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা ঘটানোর পর বোরহান মাদবর ও হক মাদবরের ছেলেরা তাদের নিজেদের ঘরবাড়ী কুপিয়ে ঘরের মালামাল সরিয়ে নিয়ে যায়। এখনো তারা তাদের ঘরবাড়ীতে থাকা মালামাল সরিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ তারা যেনো বিষয়গুলো খেয়াল রাখে।
জানতে চাইলে জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল-আমিন বলেন, মুরগী নিয়ে বিবাদের জেরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে নজরুল মাদবর, সুমন মাদবর ও তাদের পিতা লতিফ মাদবর আহত হয়। পরে তাদের জাজিরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার হয়। পরে নজরুল ও তার ভাই সুমন মাদবরের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাজনক অবস্থায় মারা যায়। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন। আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে