ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সন্ত্রাসের গডফাদারকে অভিনন্দন জানাতে পারেননি মুহিত

এমএ রহিম, সিলেট: | প্রকাশের সময় : শনিবার ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪৮:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

২০০১ সালের ২ অক্টোবর। জাতীয় সংসদ নির্বাচ শেষ হয়েছে।  সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে বিএনপি। সরকার গঠনে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। নির্বাচন শেষ হওয়ার দুইদিনের মাথায় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী মতি ভাই সিলেট এলেন। সিলেট নগরীর তালতলায় হোটেল হিলটাউনে উঠলেন। পত্রিকাটির ব্যুরো প্রধান আমি। রাতের খাবার খেলাম এক সাথে।

 

মতি ভাই জানিয়ে দিলেন পরদিন খুব সকালে যাওয়ার জন্যে। সাতসকালে আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসভবনে যাবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী হিলটাউন হোটেলের সামনে হাজির হলাম সূর্য উঠার আগেই। দেখলাম মতি ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। 

 

টিপটিপ বৃষ্টি ঝড়ছিল। মতি ভাইয়ের নির্দেশনায় একটি রিকশা নিয়ে রওয়ানা হলাম ধোপাদিঘির পারে হাফিজ কমপ্লেক্সে। হাফিজ কমপ্লেক্স আবুল মাল আবদুল মুহিতের পৈতৃক বাড়ি। নিচতলার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীম ভাইকে। মতি ভাইকে দেখে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন শামীম ভাই। ২-৩ মিনিটের মাথায় সিড়িঁ বেয়ে নেমে এলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। 

 

বললে আরে মতি যে। এতো সকালে কোথা থেকে এলে। কথার মাঝেই তিনি অট্টহাসি দিচ্ছিলেন। দুইদিন পূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি যে পরাজিত হয়েছেন তার কোনো আলামতই দেখা যাচ্ছিলনা। প্রসঙ্গত ওইসময় সিলেট-১ আসনের নির্বাচনে বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। 

 

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০১ সালে প্রথম বারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। সিলেটের অলিগলিতে মুহিতকে নিয়ে ছুটে যেতেন সে সময়কার সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ভোটারদের সাথে এএম মুহিতকে পরিচয় করিয়ে দিতেন কামরান। সন্ধ্যার আগেই প্রতিটি মিডিয়া অফিসে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছুটতেন আকাশ চৌধুরী। তিনি বর্তমানে দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি। আকাশ চৌধুরীও আন্তরিকভাবে সহযোগিতা কামনা করতেন সাংবাদিকদের। আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ফ্যাক্স বা ই-মেইলযোগে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করতেন। মাল মুহিতের সহোদর ভাই আবদুল মোমেন। 

 

যাক ফিরে যেতে হয় মতি ভাই ও মাল মুহিতের কতোপকোথন পর্বে। দুইজনই কথা বলছিলেন দাঁড়িয়ে। এক পর্যায়ে ভাষা পরিবর্তন হয়। দুইজনই অনর্গলভাবে ইংরেজি ভাষায় কথা বলছিলেন। একসময় মতি ভাই জানতে চাইলেন সাইফুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কি না? পরিস্কার ভাষায় আবুল মাল আবদুল মুহিত বললেন‘ আমি সন্ত্রাসের গডফাদারকে অভিনন্দন জানাতে পারি না, অভিনন্দন জানাইনি, জানাবো না।‘ এই কথা বলে আবুল মাল আবদুল মুহিত রওয়ানা হলেন কোম্পানীগঞ্জে। সাথে ছিলেন ইফতেখার হোসেন শামীম। তার আগে বিদেয় জানালেন আমাদেরকে। 

 

বাংলাদেশের ঘাঁটি দেশপ্রেমিক আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ  ৩০ এপ্রিল চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর এই প্রস্থানে শোকে কাতর সিলেটবাসী।