ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিলেটি মা: মায়ের সাহসে এগিয়ে চলেছি

এমএ রহিম, সিলেট : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৩:৪২:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

’মায়ের কারণে পুরো পরিবার রাজনৈতিক পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে পুরো পরিবারকে সাজিয়ে তুলেছেন মা। মায়ের প্রভাবেই শৈশব থেকে রাজনীতির চর্চা শুরু করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে। এই রাজনীতি করতে গিয়ে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। মা পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যুগিয়েছেন। মায়ের সাহসের কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আর নির্যাতনকে কখনও আমলে নেয়নি। যা অব্যাহত আছে আজো।’

 
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রশিদ ভূইয়া মমতাময়ী মায়ের আর্দশ ওইভাবে তুলে ধরেন দৈনিক বায়ান্নের কাছে।


মিজানুর রশিদ মা ও বাবার পেছনের ইতিহাস টেনে বলেন, ১৯৫২ সালে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে যুক্তরাজ্যে চলে যান বাবা। ভর্তি হন অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ে। সে সময় যুক্তরাজ্যে বাঙালি বিশেষ করে সিলেটিদের তেমন অবস্থান ছিল না। সিলেটিদের কাছে যুক্তরাজ্যের তেমন পরিচিতিও ছিল না। বাবা সেখানে যাওয়ার পর কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে বাংলাদেশে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছাপা হয়। ওই ছবি দেখে বাবা বুঝতে পেরেছিলেন যোগ্য নেতা পেয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন বাবা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৮ সালে ফিরে আসেন দেশে। দেশে ফিরেই গঠন করেন জগন্নাথপুর আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। সেই সঙ্গে প্রবেশ করেন সংসারে। ১৯৭৯ সালে আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে উঠে। এই বছর জন্ম হয় মিজানুর রশিদের। বাবা আন্দোলন সংগ্রামে নিজকে উজার করে দেন। ঘর ছাড়েন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও কাজ করেন। শিশু মিজানুর রশিদকে নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন মা।


তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল আমাদের বাড়ি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন মা। ইকড়ছই গ্রামের আমাদের বাড়িটি ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অঘোষিত ক্যাম্প। যুদ্ধের পর থেকে মমতাময়ী মা স্থানীয় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন পদ পদবী ছাড়াই। বাবা ছিলেন জগন্নাথপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু রাজনৈতিক সকল কর্মকান্ড সাজিয়ে তুলতেন মা। নির্বাচন এলে মা চষে বেড়াতেন ভোটের মাঠ। সাধারণ মানুষের পাশে যেতেন ভোটের জন্যে। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিতেন মা। দলীয় কর্মসূচিসহ জাতীয় দিবসের প্রতিটি কর্মসূচিতে মায়ের উপস্থিতি নিশ্চিত থাকত। প্রতিটি কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরতেন মা। দলীয় কর্মীদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে বাড়ি বাড়ি ছুটে যেতেন। আমাদের বাড়িটি রাজনৈতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষের পদচারণায় সব সময় মুখরিত থাকে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন করে থাকেন মা।

মিজানুর রশিদ বলেন, রাজনীতির মাঠে বাবার সহযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংসার সামাল দিতেন মা। আমরা আট ভাই বোনকে গড়ে তুলতে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। শৈশবে প্রাথমিক শিক্ষায় আরবি শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন নামাজ। স্কুলের লেখাপড়ার বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতেন। কারো সাথে অন্যায় আচরণ করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। আজো মায়ের হুকুমদারী চলে আমাদের উপর। আমরা ভাই বোনেরা কেউ রাজনীতি, কেউ ব্যবসা, কেউ বিদেশে অবস্থান করি। কিন্তু মা রুটিন করে খোঁজ খবর নেন আমাদের।      

মিজানুর রশিদ ভূইয়ার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক হারুনুর রশিদ ভূইয়া হিরন মিয়া ২০০০ সালের ২ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। হিরন মিয়া ছিলেন জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমৃত্যু তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। চারবার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছিলেন। জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। মিজানুর রশিদের মা উমেরুন নাহার খানম সমাজসেবক। জগন্নাথপুর আওয়ামী লীগের প্রাণ। নেতাকর্মীদের আশ্রয়স্থল।  

 মিজানুর রশিদের আট ভাই বোন। সবার বড় মিজানুর রশিদ। বোন  পারুল রশিদ ভূইয়া বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে। বজলুর রশিদ ভূইয়া বেঁচে নেই। মামুনুর রশিদ ভূইয়া বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে। আমিনুর রশিদ ভূইয়া ব্যবসায়ী। পাপিয়া রশিদ ভূইয়া বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে। জাহেদুর রশিদ ভূইয়া ব্যবসায়ী। হাসিনুর রশিদ ভূইয়া বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে।

মিজানুর রশিদ বলেন, মায়ের অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনায় রাজনীতিতে আমার পথা চলা। জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সহভাপতি ছিলাম। জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। শেখ রাসেল স্পোটিং ক্লাব ও বঙ্গবন্ধু স্পোটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম। জগন্নাথপুর ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দুইবার মেয়র ছিলেন জগন্নাথপুর পৌরসভার। বর্তমানে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এরশাদ ও বিএনপির আমলে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। এরশাদ আমলে আমার উপর গুলির ওয়ার্ডার ছিল। ১/১১ বা জরুরি সরকারের আমলে গ্রেফতার করা হয় আমাদের প্রাণপ্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক রাস্তায় নামি। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। বন্দিঘরে চালানো হয় নির্যাতন। ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ করতে মাঠে নেমে গ্রেফতার হই। জুলুম নির্যাতনের সময় প্রতিবারই পাশে দাঁড়িয়েছেন মা। সাহস যুগিয়েছেন। মায়ের সাহসে আজো এগিয়ে চলেছি।