ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিসি ক্যামেরা বসানো যাত্রীদের সকল সুবিধাসহ বিলাসবহুল কোচ শিঘ্রই যুক্ত হচ্ছে রেলবহরে

রাজশাহী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৪:০৩:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়
যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন কোচগুলোতে আধুনিক টয়লেট, ওয়াশিং বেসিন, স্লাইডিং দরজা, টিভি মনিটর, পরিবেশবান্ধব বায়োটয়লেট, শারীরিকভাবে অক্ষম যাত্রীদের জন্য বিশেষ ধরনের টয়লেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
 
ভ্রমণরত যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ব্যবস্থাসমৃদ্ধ কোচ কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে ১০০টি ব্রড গেজ কোচ কেনা হচ্ছে। এ কোচগুলোতেই থাকছে সিসি ক্যামেরাসহ যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন কোচগুলোতে আধুনিক টয়লেট, ওয়াশিং বেসিন, স্লাইডিং দরজা, টিভি মনিটর, পরিবেশবান্ধব বায়োটয়লেট, শারীরিকভাবে অক্ষম যাত্রীদের জন্য বিশেষ ধরনের টয়লেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।সম্প্রতি রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় কোচগুলোর স্পেসিফেকশন চূড়ান্ত করেছে সংস্থাটি। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ঢাকা-যশোর রেলপথসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে চলবে এসব কোচ।
 
এর বাইরে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে ২০০টি ব্রড গেজ ও টেন্ডারার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ২০০টি মিটার গেজ কোচ কিনছে রেলওয়ে। এসব কোচেও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের নিতীনিরধারক উর্ধতন কর্মকর্তারা।
 
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০টি ব্রড গেজ কোচ কেনা হচ্ছে চীনের সিআরইসি তাংশান কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে। এসব কোচের মধ্যে রয়েছে চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কোচ, ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচ, ৫২টি শোভন চেয়ার কোচ, ১৮টি প্যান্ট্রি ও গার্ডব্রেকসহ শোভন চেয়ার কোচ এবং ১০টি পাওয়ার কোচসহ শোভন চেয়ার কোচ।
 
এ কোচগুলোর প্রতিটিতেই থাকবে সিসি ক্যামেরা। চেয়ারকোচগুলোতে ক্যামেরাগুলো বসানো থাকবে কোচের ভেতরে। আর স্লিপার কোচে ক্যামেরা লাগানো থাকবে কোচের করিডোরে। সম্প্রতি রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন কোচগুলোতে আধুনিক টয়লেট, ওয়াশিং বেসিন, স্লাইডিং দরজা, টিভি মনিটর, পরিবেশবান্ধব বায়োটয়লেট, শারীরিকভাবে অক্ষম যাত্রীদের জন্য বিশেষ ধরনের টয়লেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
 
 
 
 
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০১১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০টি মিটার গেজ ও ২২০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী কোচ কেনা হয়েছে। এসব মিলে বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সচল যাত্রীবাহী কোচ আছে ১ হাজার ৬৭১টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২০৩টি মিটার গেজ কোচ। বাকিগুলো ব্রড গেজ। মিটার গেজ ও ব্রড গেজ মিলে বর্তমানে এসি কোচ রয়েছে ২১৬টি। নন-এসি কোচের সংখ্যা ১ হাজার ৪৫৫টি।
 
রেলের বহরে দেড় হাজারের বেশি কোচ থাকলেও এগুলোর সিংহভাগেরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, যাত্রীবাহী ১ হাজার ৭৭১টি কোচের মধ্যে ৫৯২টি মিটার গেজ ও ২৬৬টি ব্রড গেজ বগির আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। শতাংশের হিসাবে রেলের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া কোচের পরিমাণ ৪৭ ভাগ। প্র্রায় অর্ধেক কোচের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ট্রেন পরিচালনা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
 
তবে রেলের রোলিং স্টকের এ অবস্থার জন্য দীর্ঘদিন ধরে রেল খাতের উন্নয়ন না হওয়াকে দায়ী করছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকেই বলতে গেলে রেলের উন্নয়ন থমকে গেছে। এ সময়ে সড়কপথে যত উন্নতি হয়েছে, রেলে তার ছিঁটেফোঁটাও লাগেনি। ২০১৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রেলকে আলাদা মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। রেলের উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক দশকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে তিন শতাধিক নতুন কোচ কেনা হয়েছে। কোচ কেনার জন্য আরো একাধিক প্রকল্প চলমান আছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজকে যেভাবে রেলের উন্নতি হচ্ছে, তাতে আমরা আশা করি, কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি উন্নত ও আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।