ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্বপ্নের রেলে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী (কক্সবাজার): | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:৪০:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বপ্নের রেল নেটওয়ার্কের আওতায় যুক্ত হতে চলেছে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সকালে এটি উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। এর মাধ্যমে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যাবসায়ীরা। উদ্বোধনের আগে ঝিনুকের আদলে তৈরি করা বিশ্বমানের দেশের একমাত্র আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনটি এখন শেষ মুহুর্তের সাজসজ্জার কাজ চলছে। 

 

 

তথ্য মতে, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি বহুদিনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের দাবি দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়।

 

গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিঃমিঃ রেললাইনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদরসহ স্টেশন থাকছে আটটি। এজন্য সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু। এছাড়া রেলপথে তৈরি হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঝিনুকের আদলে আইকনিক রেলস্টেশন। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

 

১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হলেও বানিজ্যিক ভাবে রেল চলতে আরো সময় লাগবে। তবে ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই কক্সবাজারে রেল চলাচলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে প্রকল্প ও রেল মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে চড়ে সহজে কক্সবাজারে আসবেন পর্যটকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তেমনি সহজভাবে দেশের সব প্রান্তে যাবেন কক্সবাজারবাসীও। সহজ হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়া। এতে বাড়বে কক্সবাজারে পর্যটক স্রোত। পর্যবেক্ষকদের মতে, রেলপথ সচল হলে সবদিক দিয়ে ঘুরে যাবে কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকা।

 

সম্প্রতি কক্সবাজারে রেল প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ও পরে এডিবি কর্তৃপক্ষ। তারা কাজে সন্তুষ প্রকাশ করেছেন।

 

এসময় রেলমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের জন্য টুরিস্ট কোচের আদলে উন্নতমানের কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি কোচ কেনা হবে, যেগুলোর জানালা সুপ্রশস্ত। মানুষ অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে।

 

প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জি এম আলমগীর বলেন, এটি কক্সবাজারবাসীর মতো আমাদের কাছেও স্বপ্নের প্রকল্প। নদী-নালা-খাল বিল, পাহাড় ঘেঁষে হচ্ছে এ প্রকল্পের কাজ। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুইভাগে কাজ করছে। নিখুঁতভাবে দ্রুত কাজ করছি আমরা।

 

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর্স অব কক্সবার(টুয়াক) এর সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কক্সবাজার রেলপথ এখন স্বপ্ন নয়-বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় চলতি বছরেই রেল আসার প্রতীক্ষায় রয়েছে কক্সবাজারবাসী। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চালু হলে অবশ্যই পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।

 

 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটন নগরীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডোয়েল গেজ ও সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।