পদ্মা সেতুর প্রথম দিনেই দুর্ঘটনা আর হঠাৎ করেই সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ। এমন সিদ্ধান্তে মাথায় যেন আমাদের আকাশ ভেঙে পড়ল। মনে কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসা রফিকুল ইসলাম মন্ডল।
বিয়ে করেছেন চার মাস হলো। নতুন বউকে নিয়ে ঢাকা আসা হয়নি। আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হলে সেতুর ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে ঢাকায় আসবেন, বেড়াবেন আত্বীয়দের বাসায়। এসেও ছিলেন বউকে সঙ্গে নিয়ে বাইক চালিয়ে। কিন্তু, হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত হওয়ায় বেশ কষ্টে পেয়েছেন তারা। এখন তাদের মাদারীপুর যেতে হবে ফেরিতে করে, অনেকটা পথ ঘুরে। এতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা।
মাওয়া টোল প্লাজায় মোটরসাইকেল গেলেই পুলিশ বাধা দিচ্ছে। হঠাৎ করে মোটরসাইকেল বন্ধ হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন পদ্মার এপাড়-ওপাড়ের মানুষ। ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের সংখ্যা ছিলে হাতে গোনার মতো। দোলাইপাড়, পোস্তগোলা টোলবক্স, শীতলক্ষা টোল বক্সের সামনে মোটরসাইকেল ছিল না বললেই চলে। আর যাদের দেখা মিলেছিল তারা স্থানীয় বাসিন্দা।
অন্য সময় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পাঠাও মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও আজ ছিল একেবারেই ফাঁকা। মোটরসাইকেল কম থাকায় পোস্তগোলা ব্রিজের ওপরে মাওয়া ও দূরপ্রান্তে যাওয়ার বাসগুলোর সামনে ছিল প্রচুর ভিড়। কোনো বাস আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে যাত্রীরা।
শরিয়তপুরগামী যাত্রী সোহেল বলেন, মোটরসাইকেল না থাকায় বাসওয়ালাদের সুবিধা হয়েছে। ভাড়া বেশি নিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে বাস চালক ও হেলপাররা খারাপ ব্যবহার করছে। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মরবে বড় লোকের ছেলেরা, আর ভোগান্তিতে পড়বো আমরা সাধারণ জনগণ?
পোস্তগোলা ব্রিজের টোলা আদাকারী মাসুদ বলেন, রোববার মোটরসাইকেলের কারণে আমরা টোল নিতে হিমশিম খেয়েছি। আর আজকে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মনে হয় ৫০ টাও মোটরসাইকেল যাওয়া আসা করেনি।
সকাল থেকে ফেরি চলাচলও বন্ধ ছিল। তাই আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দু’পাড়ের মোটরসাইকেল আরোহীদের। পরে সকাল ১০ টার নাগাদ ফেরি চলাচল শুরু হলে ভোগান্তি কিছুটা কমে।
প্রসঙ্গত, রোববার (২৬ জুন) ভোর ছয়টা থেকে সব ধরনের যানবাহনের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে রাত ১০টায় মারাত্বক দুর্ঘটনায় মোটসাইকেলের দু’জন আরোহী মারা যান। এর পরপরই সেতু বিভাগ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের মোটরসাইকেল (২৭ জুন থেকে) অনিদিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।