৩৩ মণ ওজনের বিশাল এক ষাঁড়, নাম তার ‘বুড়ো’। এই ‘বুড়ো’কে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে আশেপাশের এলাকার মানুষ। স্বামীহারা হতদরিদ্র মর্জিনা খাতুন নিজ সন্তানের মতো এই ষাঁড়টিকে পালন করেছেন। চরম অভাবের সংসার হলেও ৩ বছর ২ মাস বয়সী বুড়োর যত্নের কোনো কমতি করেননি কখনই। নিজে ও ৩ সন্তান না খেয়ে থাকলেও বুড়োর জন্য দৈনিক ৮০০ টাকার খোরাকি তিনি ঠিকই সময়মতো দিয়েছেন।
মর্জিনা খাতুন ঝিনাইদহের শৈলকুপার দিগনগর ইউনিয়নের হড়রা গ্রামের ছনু মিয়ার স্ত্রী। আসছে কোরবানির ঈদে ‘বুড়ো’কে বিক্রি করে নতুন স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
অনার্স পাস করা মেজ মেয়ে সাথী খাতুন বলেন, তাদের বাবা ছনু মিয়া বোন ক্যান্সারে গত হয়েছেন ৬ মাস আগে। তিনি ও তার বড় বোন সাথী খাতুন অনার্স পাস করেছেন। তবে ছোট ভাই আশিক মিয়া কেবল অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। জায়গাজমি বলতে ভিটেবাড়ি ১০ শতক জমির ওপর। বাবা চিরকালই অন্যের জমি লিজ নিয়ে আমাদের সংসার চালিয়েছেন। মোটামুটি দিন আনা দিন খাওয়া সংসার ছিল তাদের। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার ছেয়ে যায় কালো মেঘে। এখন মাঝে মাঝে না খেয়েও দিন পার করতে হয় তাদের।
ভাই আশিক বলেন, বুড়োর জন্ম আমাদের বাড়িতে। একটি গাভী থেকে ওর জন্ম হয় আজ থেকে ৩ বছর দুই মাস আগে। আমরা না খেয়ে থাকলেও বুড়োর যত্নের কখনই কমতি হয় না। দিনে কমপক্ষে দুই বার তাকে গোসল দেওয়া হয়। মাথার ওপর চলে একটি ফ্যান সবসময়।
মর্জিনা খাতুন বলেন, বুড়ো এখন আমাদের সংসারের একমাত্র সম্পদ। তাকে সন্তানের মতো লালন করেছি। কখনই কিছুতে কমতি করা হয়নি। এখন তাকে দৈনিক ৮শ টাকার বিভিন্ন ধরনের খাবার ভুষি, খৈল, খড়, ছোলা ও ঘাস খাওয়ানো হয়।
তিনি আরও বলেন, বুড়ো নামটি শখের বসে দেওয়া। তবে সন্তানের মতোই ওকে লালন-পালন করা হয়েছে। ওর মা ৩ বছর ২ মাস আগে আমাদের বাড়িতে ওকে জন্ম দেয়। ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরু এখন আর পালা সম্ভব না। তাই বিক্রি করতে চাচ্ছি। দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ। তবে কিছু কম হলেও ওকে ছেড়ে দেব। সত্যি কথা বলতে বুড়োকে বেচতে হাটে যাব সেই সামর্থ্যও আমাদের নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার জানান, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় ২ লাখ ৪ হাজার ৯’শ ২৮ টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪০ হাজার বাড়তি পশু পাঠানো হবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বড় হাটে। জেলায় এবছর ১৭টি বড় হাট বসবে। এ বছরই প্রথম প্রত্যেক বড় হাঠে ব্যাংকের বুথ থাকবে যাতে ব্যবসায়ীরা সহজে টাকা লেনদেন করতে পারেন।
তবে দামের ব্যাপারে তিনি সত্যতা স্বীকার করে জানান, গো-খাদ্যের দাম অত্যাধিক হওয়ায় খামারিরা দাম নিয়ে আসলেই শঙ্কায় রয়েছে। পশু পালনে ও বাজারজাতকরণে খামারিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।