আজ ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে এ দেশের সিপাহী জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল আধিপত্যবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। সফল এক বিপ্লবের মাধ্যমে এ দেশের জনগন নতুন প্রত্যয়ে জেগে উঠে সেদিন। ৭ই নভেম্বরের বিপ্লবের সফলতার সিড়ি বেয়েই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছি। পেয়েছি বাক, ব্যাক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
১৯৭৫ সালের ৩ রা নভেম্বর থেকে ৬ ই নভেম্বরের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষ হয় ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দী দশা থেকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার মাধ্যমে। ৩রা নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সে সময়ের সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দী করে এক সামরিক অভ্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা দেশের আপামর জনগন ও সিপাহীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্ব মহলে বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যাবস্থা গ্রহন ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ফলতঃ ৬ই নভেম্বর ১৯৭৫, মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে।
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের ষড়যন্ত্র, ক্যু এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচনার প্রথম ও আনুষ্ঠানিক মাইলফলক ধরা হয় ১৯৭৫ সালের ৬ ই নভেম্বর মধ্য রাতের সিপাহী জনতার বিপ্লব এবং জিয়াউর রহমানের মুক্তিকে। সিপাহী জনতার এই বিপ্লবের মাধ্যমেই আধিপত্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, একদলীয় শাসন, জনজীবনের বিশৃংখলা ও বিরাজমান নৈরাজ্যের অবসান ঘটে। বাংলাদেশ একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে ফিরে আসে।
এরই প্রেক্ষিতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপর অর্পণ করা হয় দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব। তিনি এ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ফিরতে শুরু করে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার নতুন দিগন্তে। সিপাহী জনতার সফল বিপ্লব পরবর্তীতে জেনারেল জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক সংক্ষিপ্ত ভাষন প্রদান করেন। তিনি বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। আমি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগন, সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যান্যদের অনুরোধ আমাকে সাময়িকভাবে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চিফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করতে হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশাআল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণ ভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বস্থানে, অফিস, আদালত, যানবাহন, বিমান বন্দর, নৌ বন্দর, কলকারখানা গুলো পূর্ণ ভাবে চালু থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী জনতা আলিংগন করেছে একে অপরকে। নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সিপাহী জনতার মিলিত বিপ্লবে ভন্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাংকের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর, নগর, গ্রামেও পৌছে যায়।