জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভারতীয় অর্থায়নে চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও চারটি প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত একটি পক্ষ। এই প্ল্যাটফর্মগুলো হলো আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ এবং শহিদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমতি দ্রুত দেওয়ার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে এর প্রতিবাদে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন এবং ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ সেখানে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়। রাত সাড়ে ১১টায় একই দাবিতে শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এসময় তারা “ভারতীয় আগ্রাসন মানি না, মানব না”, “দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা”, “ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ চলবে না”, “মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবন নির্মাণ হবে না” এবং “আবাসিক হলের সামনে ভবন নির্মাণ হবে না” ইত্যাদি স্লোগান দেন।
চারুকলা বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রমা রাহা বলেন, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আজকে এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। পড়াশোনা আগে না কি গাছ আগে৷ আমাদের ক্লাসরুম নেই, ক্লাস করতে পারি না। এখন আমাদের জন্য যখন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তখন মাত্র ৫/৬ জন ব্যক্তির কথায় প্রশাসন ভবন নির্মাণ বন্ধ করে দিলেন। ১৫ কর্মদিবস পার হয়ে গেলেও প্রশাসন এখনো মুলতবি সভা পুনরায় সভা আহ্বান করল না৷ কাজেই বাধ্য হয়েই আজকে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি৷ আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করুক।
আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের নেতারা বলেন, আমরা সবসময় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। যখন প্রতিবেশী দেশ ভারত নানাভাবে আমাদের ওপর আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করছে, তখন তাদের অর্থায়নে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ হতে পারে না। ভবন চাই, তবে সেটি আমাদের নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ করতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন,প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আপত্তি থাকলেও প্রকল্প পরিচালক ময়েজ উদ্দিন ছাত্রলীগের নেতাদের দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কাজ শুরু করিয়েছেন।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন,যারা মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নির্বিচারে এত গুলো গাছ কেটে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েন।
রাত ৯টার পরও অবরোধ না উঠলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সমাধান ও আলোচনার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন,আগামী ২৮ নভেম্বর সব পক্ষকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সবার যৌক্তিক মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ান্ন/এসএ