জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের মাইলফলকে এসে উঠে দাঁড়াল প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তোলার শপথ করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথ পাঠ করানোর আগে বক্তব্যে তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্ত এ জাতি বৃথা যেতে দেবে না।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের প্রথম দিন গতকাল প্রধানমন্ত্রী সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনার সময় শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে শপথ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে আটটি বিভাগীয় শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন এ শপথ অনুষ্ঠানে। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, বিশ্বসভায় উন্নত-সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এখন শপথ গ্রহণ করব। প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমি এখন শপথ বাক্য পাঠ করব। আপনাদের আমার সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’ শপথ বাক্যে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’ এ সময় সব মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। শপথ বাক্য পাঠ শেষে জাতীয় পতাকা হাতে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’ স্লোগান দিয়ে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’ স্লোগান দেন উপস্থিত অতিথিরা। শপথ বাক্য পাঠ করানোর আগে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুসহ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, “আজ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেননি। তাই বাঙালিদের ওপর শুরু করেন নিপীড়ন-নির্যাতন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর ভাষণে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বাংলাদেশের জনগণ তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।” বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও’।” তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। আগে থেকেই ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী তার তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়। থানায় কর্মরত অফিসাররা তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোররাতে পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত সেই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন। ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্য নেতারা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রচারিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্য বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সেসব দেশের জনগণ। মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়।’
যেমন ছিল মূল আয়োজন : শপথ অনুষ্ঠানের পরই শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। এ পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ ছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এই আয়োজনের বক্তৃতা পর্বের শেষে সভাপতির ভাষণের আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে ‘মুজিব চিরন্তন শ্রদ্ধা স্মারক’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। এ সময় মঞ্চে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি। এটি একটি জাতির জন্য খুব কম সময় নয়। সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার হিসাব মেলানোর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আর তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে। বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই। জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সবার চাওয়া-পাওয়া।’ স্বাধীন দেশের নাগরিকদের তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই তা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে এর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সব ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।’ বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়া আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বই পড়ে বা একাডেমিক চর্চা থেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অর্জন করেননি। তিনি রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন গণমানুষের কাছ থেকে। তিনি জনগণের ভাষা বুঝতেন, তাদের দাবি-দাওয়া ও প্রয়োজনের কথা জানতেন এবং সব সময় তাদের পাশে দাঁড়াতেন। পৃথিবীতে তাদেরই স্টেটসম্যান বা রাষ্ট্রনায়ক বলা হয়, যাদের ভূমিকার কারণে ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি ও দিক বদলে যায়। রাষ্ট্র বা দেশের চরিত্র বদলে যায়। মানচিত্র বদলের পাশাপাশি শাসনকার্যেও আমূল পরিবর্তন ঘটে। এমনকি রাষ্ট্রের কাঠামোও নতুনভাবে গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমনই একজন মহানায়ক, যার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি শোষণ-নির্যাতনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল। পেয়েছিল একটি স্বাধীন দেশ ও একটি প্রজাতন্ত্র। স্বাধীন দেশ, প্রজাতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান প্রণয়ন, রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির রূপরেখার পরিকল্পনা- এসব কাজ একই সঙ্গে বিশ্বে আর কোনো মহানায়কই করতে পারেননি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতিহাস তিনিই গড়তে পারেন, যিনি নিজে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারেন এবং অন্যদের দেখাতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকেন ও অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র জাতিকে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তাই তো সামগ্রিকতায় বঙ্গবন্ধু যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, তেমনি বিশ্ব ইতিহাসেও সেরা মহানায়ক। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে রাষ্ট্রপতির আশা, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে সবাই এগিয়ে আসবে। সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ৫০ বছর আমাদের স্বাধীনতার। আমরা কতদূর এগোতে পেরেছি সেটাই বড় কথা। দারিদ্র্যের হার আমরা ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়েছি। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো আমরা পৌঁছে দিয়েছি। প্রত্যেকটি গৃহহারা মানুষ, ভূমিহীন মানুষকে আমরা বিনা পয়সায় ঘর দিচ্ছি, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আর আমাদের সেটিই লক্ষ্য। আজকের বাংলাদেশে আমাদের মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমরা সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছি। যেটা জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দিয়েছিলেন সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি নিয়েই সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমাদের দেশের উন্নয়নের চাকাকে সচল রেখেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে বিজয়ের উৎসব আমরা ব্যাপকভাবে উদযাপন করেছি। করোনার কারণে আগে আমরা করতে পারিনি। তবে এবার আবার আমরা নতুন উদ্যমে আমাদের বিজয়ের এ উৎসব করেছি। এ উৎসব শুধু উৎসব নয়, এ উৎসব আমাদের আগামী দিনের চলার পথের প্রতিজ্ঞা- বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে ইনশা আল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’