একদিকে আনোয়ারা উপজেলা অন্যদিকে পটিয়া উপজেলা। একটি স্লুইসগেটের মাধ্যমে দুই উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে বাকখাইন ও কৈখাইন নামে দুইটি গ্রাম। গত বছর ইছামতি খালের শাখা দক্ষিণ বাকখাইন নোয়ারাস্তা কান্দুরিয়া খালের উপর নির্মিত হওয়া স্লুইসগেটটিতে হয় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। যার ফলে বছর না যেতেই খালের ভিতর তলিয়ে যায় স্লুইসগেটসহ ১০০ মিটারের বেড়িবাঁধ।
এলাকার মানুষ গত চার মাস ধরে গ্রাম বন্দি হয়ে আছে। দুর্ভোগে চলছে এখানকার মানুষের জীবন সংসার। অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। স্লুইসগেটসহ বেড়েবাঁধ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে পুরোই বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক মাস ধরে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। গর্ভবর্তী মহিলা, ডায়রিয়া এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিয়ে বেশ কষ্ট আছে।
বর্তমানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। দিনে কোন মতে পার হলেও রাত ১০ টার পর নৌকা চলাচল করে না। রাতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে চেষ্টা করেও হাসপাতালে নেওয়া যায় না। আবার দিনের বেলা খালের মধ্যে ভাঁটা হলে হাঁটু পরিমাণ কাঁদাতে নেমে কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে অসুস্থ রোগীকে নৌকায় তুলে পারাপার করতে হয়।
এলাকাবাসীর উদ্দ্যোগে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো দিলেও প্রবল স্রোতের বেগে ১০ দিনও ঠিকেনি। স্রোতের সঙ্গে ভেঙ্গে গেছে সাঁকো। যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে অর্ধেক মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় ভাড়া বাসায় চলে গেছে।
অসহায় মানুষের চোখে মুখে ভেসে ওঠে একটি দুর্ভাগা গ্রামের বন্দিশালায় জীবন চলা কতটা কষ্ট ও অসহায়ত্বের চেহেরা।
আনোয়ারা উপজেলার ইছামতি খালের শাখা দক্ষিণ বাকখাইন নোয়ারাস্তা কান্দুরিয়া খালের উপর আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্লুইস গেইটটি বছর যেতে না যেতেই পানির ভিতর তলিয়ে যাই। এছাড়াও জোয়ারের পানির স্রোতে খালে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ।
এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাকখাইন গ্রামের বাসিন্দারা । বাকখাইন গ্রাম ছাড়াও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশেপাশের আরো বেশ কয়েক গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাদের। স্লুইস গেইটটি বিলীন হওয়ার ফলে উপজেলার চাতরী, পরৈকোড়া, বারখাইন, আনোয়ারা সদরসহ চারটি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির কারণে স্রুইস গেইটটি বেড়িবাঁধসহ খালে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই পয়েন্টে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করা এবং স্লুইস গেইটের উভয় পাশে ব্লকসহ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এটি বিলীন হয়ে গেছে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্লুইস গেইটসহ প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ পুরোপুরি খালে বিলীন হয়ে গেছে। নৌকা নিয়ে পারাপার হচ্ছে স্থানীয় লোকজ।