ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। দেশ ব্যাপি আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের উপর। জেলার একমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরের দিন শহরের ঝিনাইদহ - কুষ্টিয়া মহাসড়কের উপর আছড়ে পড়ে। মজমপুর গেট, সাদ্দাম বাজার মোড়, ডিসি কোট গেট, উপজেলা মোড়, কাস্টমস মোড়, ফুলতলা মোড়, চৌড়হাস মোড় চলে যায় আন্দোলনকারীদের দখলে। আন্দোলন দমন করতে পুলিশের পাশাপাশি রাস্তায় অবস্থান নেয় জেলা ছাত্রলীগ এর গুটিকয়েক নেতা কর্মী। অপরদিকে আন্দোরনকারীদের সাথে যোগদেয় এলাকাবাসী। অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা স্থানীয় এলাকাবাসীকে মারধর ও গালাগালি করলে স্থানীয়রা একহয়ে ছাত্রলীগের ৯ টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের তাড়াদিয়ে ছন্নছাড়া করে দেয়। একই দিন সন্ধায় আন্দোলনকারীরা চৌড়হাস মোড় থেকে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে মজমপুর গেটে পৌছায়ে গোয়ালন্দ মেইল ট্রেনের গতিরোধ করে প্রায় আধাঘন্টা মহরের জিরো পয়েন্টে থামিয়ে রাখে। এরপর পুলিশের লাঠিচার্জ খেয়ে ঐদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পালিয়ে যায়। এর পরের দুই তিন দিন আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ইট পাথর ছুড়ে পুলিশের রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও বেধরক লাঠিচার্জের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের গুলিতে ইয়ামিন, ইভান সহ পাঁচ জন মৃত্যুর কথা জানান আন্দোলনকারীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রতিহত করতে পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঠে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জেলার প্রভাবশালী নেতাদের মাঠে না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন কর্মীরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও ব্যাতিক্রম ছিলো কুষ্টিয়া। এজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু বহু প্রভাবশালী নেতার বাস। শহরের কয়েক পয়েন্টে দেখাযায় কর্মীরা আন্দোলন প্রতিহত করতে প্রস্তুত হলেও নেতার অভাবে তারা মাঠে নামতে পারিনাই। এতে দলের মধ্যে গ্রুপিং ও দন্দ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দক্ষতার কমতি আছে বলে মনে করেন দলের অনেকেই। আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা বলছেন, যারা দলের পরিচয় বিক্রি করে কাড়ি কাড়ি অর্থ কামাচ্ছেন ও দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সময় এসেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে সামনে কঠিন পরিস্থিতি
হতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই কঠিন সময়ে হাতে গোনা কিছু নেতা-কর্মী ছিলেন। ১৭ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অবস্থান নেন তারা। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী সহ কিছু নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তবে শহরের চৌড়হাস মোড়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর বদলে যায় চিত্র। ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রতিহত করতে গিয়ে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে আসেন। এ সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে ধোলাই করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের মোটরসাইকেল।
আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা ভোগী স্থানীয় কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু আছে সমালোচনার শীর্ষে। তার বাড়ির গেটের সামনে আন্দোলনকারীরা তান্ডব চালালেও চৌড়হাস ও আশেপাশের এলাকায় ত্রাস বলে পরিচিত বাবু ওরফে মাছ বাবু সে সময় গাঢাকা দেন। এমনি সময় তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে চলাফেরা করলেও আন্দোলন চলাকালীন তার চেহারা দেখেনি নেতা কর্মীরা। ঠিক একই ভাবে দেখা যায়নি জেলা শহর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ এর ভাই আতাউর রহমান আতা, কৃষক লীগ সভাপতি মকবুল হোসেন লাবলু, তারভাই যুবলীগ নেতা আব্দুল আলীম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব বাদশা, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকির হোসেন, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সোহেল আহমেদ সহ অনেককে। তাদের সকলের বসবাস আন্দোলন চলা জায়গায় মধ্যে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনার পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লীগের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে ফোন দেন। তবে সেই ডাকে অনেকেই বলেন, ১৫ বছর ধরে যারা সুবিধা নিয়েছেন, ভালো পদ-পদবি পেয়েছেন, টেন্ডার থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাদের মাঠে নামতে বলেন। তারা সামনে থাকবে, আমরা পেছনে থাকব প্রয়োজনে। বেশির ভাগ হাইব্রিড ও সুবিধাবাদী নেতাদের ওপর বিরক্ত ও ক্ষোভ থেকে মাঠে নামতে চাননি। কর্মীরা অভিযোগের সুরে বলেন, 'জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সম্পাদক মাঠে ছিলেন
স্বচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদেরও মাঠে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগের গুটিকয়েক নেতা
থাকলেও তাদের সাথে ছিল না কর্মী।
দলের সাবেক এক নেতা বলেন, 'যাদের দলে কোনো পদ-পদবি নেই, যারা ক্ষমতার স্বাদ পান না, তারা এই ক্রাইসিসে কেন মাঠে নামবে? বরং অনেকে আওয়ামী লীগ করে নিজ দলের নেতার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। তবে এত কিছুর পরও দুষ্কৃতকারীদের রুখতে শেষ পর্যন্ত এই ত্যাগী নেতা-কর্মীরাই মাঠে নামেন।' জিয়ারখি ইউনিয়নের এক যুবলীগ কর্মী অভিযোগ করে বলেন, "প্রায় ১৮-২০ বছর যুবলীগ, কৃষক লীগ করে আওয়ামী লীগের সাথেই আছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাকে নাশকতাকারী জামাত বিএনপি বানিয়ে দলের আরেক অংশ আমাকে আন্দোলনকারী হিসেবে নাশকতা মামলায় ফাঁসাতে চেয়েছিলো। থানায় মামলায় আমার নাম দিয়ে আমাকে হয়রানি করে। পরে এক যুবলীগ নেতা গিয়ে সমাধান করে।