ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনার ছেলে বরিশাল ও খুলনা ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মনির-উজ-জামান টুকুর ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ ও শৈলকুপা আওয়ামীলীগে তোলপাড় চলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা মনির-উজ-জামান নিজের ফেসবুক প্রফাইলে কোটা বিরোধী আন্দোলনে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহতদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দেন।
মনির-উজ-জামানের ফেসবুকে লিখেন “হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বেশ কয়েকদিন যাবত, বিবেকের তাড়নায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছি প্রতিনিয়ত, দেশের ২০০-২৫০ জন শিশু-কিশোর-যুবক-যুবতীকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের বাবা মার ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র-গুলি দিয়ে। আর এই হত্যাকারীরা হলো বাংলাদেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, যাদের জীবন জীবিকাও চলে জনগনের ট্যাক্সের টাকায়!! এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটির সদস্য হিসাবে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। লজ্জিত অপমানিত বোধ করছি। এ বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের জন্য তীব্র ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করছি। শত শত বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর কোন নিষ্ঠুরতম স্বৈরাচারী সরকারের আদেশে দেশের কোন বাহিনী মাত্র দু-তিন দিন সময়ের মধ্যে এত শিক্ষার্থীকে হত্যা করেনি। কি বিচিত্র অমানবিক বিবেকহীনদের দেশে আমরা বসবাস করি! এতবড় নজিরবিহীন নৃশংস হত্যাকান্ডের দায় নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন মন্ত্রী, পাতিমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন পদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেনি। অথচ এরা নিজেদের ক্ষমতা ও সীমাহীন দূর্নীতির স্বার্থে বহু বছর যাবত পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে গোটা পুলিশ বাহিনীকে আজ গনমানুষের শত্রুতে পরিণত করেছে। মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে পুলিশের শত শত যান, পুলিশ স্থাপনাসমূহ তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে। পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখছে। হাটে বাজারে পথে ঘাটে পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করছে। ঘরে বাইরে সর্বত্র পুলিশ আজ ঘৃনার পাত্র।
আমিই একমাত্র বিসিএস পুলিশ অফিসার হিসাবে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেনাশাসক স্বৈরাচারী এরশাদ ও বিএনপি-জামাত ফ্যাসিবাদী অত্যাচারী সরকারের একসময়ের আশীর্বাদপুষ্ঠ, তেল ও মালের বিনিময়ে রাতারাতি আওয়ামী পুলিশ হয়ে যাওয়া বিসিএস পুলিশের উর্ধতন অফিসারদের বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দমনপীড়নের জন্য অন্যায় আদেশ প্রত্যাখ্যান করি। যার মাসূল আমাকে আজ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। ঢাবির প্রাক্তন ছাত্রলীগার, পিতা আওয়ামীলীগ নেতা ও বিএনপি জামাতের রোষানলের শিকার অবৈধভাবে চাকুরীচ্যুত হওয়া। দীর্ঘ সাড়ে পাচ বছর চাকুরীচ্যুত থাকা সত্তেও আমাকে বিপদে ফেলার উদ্দেশ্যে তৎকালীন মন্ত্রী ম খা আলমগীরকে দিয়ে আমাকে সি এম পি'র ডিসি, ডিবি থেকে সরিয়ে বিএনপি জামাত অধ্যুষিত লক্ষীপুর জেলায় বদলী করা হয়। বিপদ আচ করতে পেরে আমি সাড়ে তিন মাস যোগদান করিনি। আমাকে চাকুরী চ্যুতির ভয় দেখিয়ে জোর পূর্বক সেখানে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার হিসাবে জেলায় যোগদানের পরে আমাকে ততকালিন অতিরিক্ত আই জি, ক্রাইম অ্যান্ড অপস প্রতিনিয়ত এসব নৃশংস অপরাধ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। ছাত্রলীগার ছিলাম সুতরাং সরকার বাচানোর জন্য আমি কেন এসব গর্হিত কর্ম করব না এই বলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে আমাকে শিবির হয়ে গেছি বলে অপবাদ দেয়া হয়। কারণ তখন মহান আল্লাহ আমাকে তার পথে নিয়ে আমাকে বুঝিয়েছেন শুধু ক্ষমতা ও অর্থের জন্য অধিকার চাওয়া মানুষ হত্যার মত জঘন্য অন্যায় কাজ করা যাবে না। আমার দ্বারা কিছু না করাতে পেরে অবশেষে মাত্র তিন মাস চারদিন পরে বিদ্যমান আইনের কোন তোয়াক্কা না করে আমাকে না জানিয়ে র্যাব ১১ এর সদস্যদের পাঠিয়ে লক্ষীপুর ম্যাসাকার করা হয়। আমাকে বরিশাল রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়। দীর্ঘ সাড়ে আট মাস আমি চাকুরীতে যোগদান থেকে বিরত থাকি। তারপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমি নিজের ইচ্ছাতেই পুলিশের অপারেশনাল পোষ্টে চাকুরী করি না।
বিএনপি জামাত আমলে আমার মত চাকুরী চ্যুত হারুন, আনিস, বিপ্লব ও মনিরুজ্জামান শাহীন কে অনেক আগেই ডি আই জি হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে অপারেশনাল বিভিন্ন ইউনিটের ডি আইজি, পুলিশ কমিশনার বানানো হয়েছে। পিএসসি মেধাক্রমকে পদোন্নতির অন্যতম প্রধান মাপকাঠি ধরা হলেও উপোরক্ত সবার থেকে আমার পি এস সি মেধাক্রম অনেক উপরে থাকা সত্তেও আমাকে পদোন্নতি দেয়া হয় নাই। দূর্ণীতি অপকর্ম ও বিএনপি জামাত আমলে তাদের সুবিধা নেয়ার কথা বলার কারনে শহীদুল হক, বেনজীরদের মত আইজিপিরা আমাকে শত্রু ভেবে নানা ভাবে বিনাকারণে হেনস্তা করেছে।
গত ১০ মাস ধরে ডিআইজি’র ৭৬ টি পদ খালি থাকা সত্তেও মন্ত্রীর কাছে বার বার বলা সত্তেও আমিসহ ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। তারপরও মহান আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া জানাই যে তিনি আমাকে তার সৎপথ দেখিয়ে, তার কিতাব আল কোরানের জ্ঞান ও ন্যায় অন্যায় প্রজ্ঞা দান করে আমাকে যে অনুগ্রহ করেছেন তা এসব ন্যায় অন্যায় প্রজ্ঞাহীন অন্যায়কারী শীর্ষ কর্মকর্তাসহ পৃথিবীর কোন প্রভাবশালী নেতাকেও দান করেনি। মানুষের টাকায় কেনা অস্ত্র গুলি দিয়ে, মানুষের টাকায় খেয়ে পরে, গাড়ী বাড়ি লোক লস্করের সুবিধা নিয়ে নরহত্যার মত মহা অন্যায় কাজ না করায় লক্ষীপুরে এসপি থাকাবস্থায় আমার বিরুদ্ধে আনা যে অন্যায় করা হয়েছিল, কি ভিত্তিহীন অযৌক্তিক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আমার জবাব সংক্রান্ত আমার বিরুদ্ধে শাস্তির কিছু চিঠিপত্র ফেসবুকে দিচ্ছি এ কারণে যে এ সব ন্যায় অন্যায় প্রজ্ঞাশূন্য অহংকারী প্রভুদের দাসত্ব না করলে তাদের ব্যক্তিগত দাস বা চাকর মনে করা গনপ্রজাতন্ত্রী সরকারের চাকরদের কি অবস্থা হয় তা যেন বিবেকবান মানুষ জানতে পারে।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের এ্যাডিশনাল ডিআইজি মনির উজ জামানের ফেসবুক স্ট্যাটান নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ারদার কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে শৈলকুপা পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম জানান, সে তো পথভ্রষ্ট আ’লীগ পারিবারের ছেলে। তার পিতা জাসদ গন বাহিনী থেকে আ’লীগে এসেছিল। তাদের কাছ থেকে এমন কিছু হবে এটাই স্বাভাবিক বলে তিনি মন্তব্য করেন।