ঢাকা, রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১

আসলজন ওষুধ বিক্রেতা

মাধবপুর প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০২:০২:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন খান ২০০১ কারারক্ষী পদে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি উত্তীর্ণও হন। কিন্তু নিয়োগের চিঠি এসে পৌঁছেনি। চাকরি হয়নি ধরে নিয়ে কিছুদিন পর তিনি ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। এর ২০ বছর পর একটি চিঠি পেলেন শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।

 

সেই চিঠিতে জানানো হলো, মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন সিলেট কারাগারে। এরপর জানা গেল, মঈন উদ্দিন গ্রামে ওষুধের ব্যবসা করলেও তার নাম–পরিচয়ে চাকরি করছেন অন্যজন। ঘটনাটি হবিগঞ্জ কারাগারের জেলারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) মো. কামাল হোসেন।

 

স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন গত ১২ আগস্ট শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খানকে একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, মঈন উদ্দিন খান নামের এক কারারক্ষী (ক্রমিক নম্বর ২১৮৬২) চাকরি করছেন সিলেট কারাগারে। ওই চিঠিতে একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠানো হয়, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। এর সত্যতা পাওয়া গেলে ইউপি চেয়ারম্যান যেন এ বিষয়ে প্রত্যয়নপত্র দেন। চেয়ারম্যান এ চিঠি পেয়ে যোগাযোগ করেন মঈন উদ্দিন খানের সঙ্গে।

 

এ সময় মঈন উদ্দিন খান ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান, তিনি কারারক্ষী পদে চাকরি করেন না। তাঁর নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য কেউ হয়তো চাকরি করছেন। এ নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়েন। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন মঈন উদ্দিন খান। তাতে তিনি এ প্রতারণার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

 

বিষয়টি জানতে পেরে ইউপি চেয়ারম্যান ১৬ নভেম্বর সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শকের কাছে একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়, তাঁর ইউনিয়নে মঈন উদ্দিন খান একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী আছেন। তবে তিনি কারারক্ষী হিসেবে চাকরি করেন না।

 

এ চিঠি পেয়ে কারা উপমহাপরিদর্শক মঈন উদ্দিনকে সশরীর সিলেট কারাগারে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঈন উদ্দিন সিলেট কারাগারে যান। মঈন উদ্দিন খান জানান, তিনি ২০০১ সালে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কারারক্ষী পরীক্ষা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল কী ছিল, তা তিনি জানতে পারেননি। রহস্যজনক কারণে যোগদানপত্র তাঁর হাতে পৌঁছায়নি। যখন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাঁকে অবহিত করেন, তখনই তিনি বিস্তারিত জানেন।

 

সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কামাল হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হবিগঞ্জ কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ অনুযায়ী জয়নাল আবেদীন ভূইয়া কাগজপত্রসহ মঈন উদ্দিন খানকে এবং তাঁর নামে চাকরি করা ব্যক্তিকে সশরীর হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী শাহজাহানপুরের মো. মঈন উদ্দিন খান গত শনিবার হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির হলেও তাঁর নাম ব্যবহার করে চাকরি করা ব্যক্তি হাজির হননি।

 

তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মো. জয়নাল আবেদীন ভূঞা বলেন, তদন্তকালে শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান কাগজপত্র নিয়ে কারাগারে হাজির হয়েছেন। তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই সঙ্গে এলাকার কয়েকজন মুরব্বিও তাঁকে শনাক্ত করে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি এ নাম ব্যবহার করে চাকরি করছেন, তিনি হাজির হননি। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আরও তদন্তের প্রয়োজন। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।